ঢাকা ০৪:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ড. ইউনূস, জামায়াত ও নাহিদ গং ‘লাশের কারিগর’, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষকের দুর্গাপূজায় ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের চিঠি ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান কমিউনিটিভিত্তিক মডেলে মাঠ-পার্ক ব্যবস্থাপনা করবে ডিএনসিসি সোহরাওয়ার্দীতে চার দিনের ‘জুলাই জাগরণ’: সাংস্কৃতিক চেতনায় ফিরে দেখা ২০২৪ বছরের প্রথম ছয় মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতা‌লি গে‌ছেন ৯ হাজার ৭৩৫ জন বিতর্কিত তিন নির্বাচন পর্যালোচনা করতে কমিটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত হওয়ার স্থানে হবে ‘স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প’ সন্ধ্যার মধ্যে সাত অঞ্চলে ঝড়ের আভাস সুনামির সতর্কতায় জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র ছাড়ল সব কর্মী

খালেদা তারেককে দায়ী করলেন বিচারপতির কন্যা

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:২৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫
  • 312

2044
সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লন্ডনে তার ওপর হামলার জন্য বিএনপি জামাতকে দায়ী করলেও বিচারপতির মেয়ে ব্যারিষ্টার নাদিয়া চৌধুরী এই হামলার জন্য সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দায়ী করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশেই তার বাবার ওপর হামলা হয়েছে। গত ২১শে অক্টোবর সন্ধ্যায় লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায় দুর্গা পূজা পরিদর্শন শেষে হামলার শিকার হন শামসুদ্দিন চৌধুরী। এ সময় নাদিয়াও তার সাথে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামসুদ্দিন চৌধুরীর কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শামসুদ্দিন চৌধুরীই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে লন্ডনে লিফলেট বিলি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনিই দিন-রাত পরিশ্রম করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা অর্জনের কথা তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, যত হুমকি আর হামলাই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে তিনি ও তার বাবা কিছুতেই ভয় পাবেন না। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও শামসুদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। নাদিয়া জানান, পূর্ব লন্ডনের এই এলাকাটি বাবার জন্য নিরাপদ মনে করছেন না তাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বাবাকে আসতে দেননি।
ব্যারিষ্টার নাদিয়া চৌধুরী বলেন, গত বুধবার লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে নেমে লন্ডনন্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রটোকলের গাড়ীতে বাসায় ফেরার পথে ফোনে সাবেক ছাত্র ব্যারিষ্টার ডালটন তালুকদারের আমন্ত্রণে শামসুদ্দিন চৌধুরী বেথনালগ্রীন দুর্গাপূজা মন্ডপ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে রাস্তায় গাড়িতে ওঠার সময় একজন লোক শামসুদ্দিন চৌধুরীর পরিচয় জানতে চান। ঝামেলা আঁচ করতে পেরে কোন উত্তর না দিয়ে বিচারপতি সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরো কয়েকজন এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা শামসুদ্দিন চৌধুরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। নাদিয়া বলেন, সেদিন তিনি সঙ্গে না থাকলে বাবা আজ কোথায় থাকতেন, তা তিনি জানেন না।
এর আগে ২০১২ সালের ২৭শে জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক কর্তৃক হামলার শিকার হন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। ২০০১ সালের ৩রা জুলাই বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান। অবসরে যাবার কয়েকদিন আগেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে প্রেসিডেন্ট বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে। এর আগে কটু মন্তব্যের কারণে তার অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছিলেন।
হাইকোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্ণেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবন সংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে। তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে প্রেসিডেন্ট চিঠি দেয়ার পর এর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি বলেছিল, বিচারপতি শামসুদ্দিনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগের উপর আঘাত।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবর্ধনায় বিচারপতি শামসুদ্দিন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছেন বলেও বিএনপি অভিযোগ অভিযোগ করে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দেয়া এই বিচারপতির অপসারণ চেয়ে সম্প্রতি এক আইনজীবী প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেন। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তবে স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ সংসদে রুলিং দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।

ট্যাগস :

ড. ইউনূস, জামায়াত ও নাহিদ গং ‘লাশের কারিগর’, অভিযোগ ঢাবি শিক্ষকের

খালেদা তারেককে দায়ী করলেন বিচারপতির কন্যা

আপডেট সময় : ১০:২৩:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

2044
সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক লন্ডনে তার ওপর হামলার জন্য বিএনপি জামাতকে দায়ী করলেও বিচারপতির মেয়ে ব্যারিষ্টার নাদিয়া চৌধুরী এই হামলার জন্য সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে দায়ী করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশেই তার বাবার ওপর হামলা হয়েছে। গত ২১শে অক্টোবর সন্ধ্যায় লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায় দুর্গা পূজা পরিদর্শন শেষে হামলার শিকার হন শামসুদ্দিন চৌধুরী। এ সময় নাদিয়াও তার সাথে ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামসুদ্দিন চৌধুরীর কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শামসুদ্দিন চৌধুরীই বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে লন্ডনে লিফলেট বিলি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করতে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে তিনিই দিন-রাত পরিশ্রম করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা অর্জনের কথা তুলে ধরে নাদিয়া বলেন, যত হুমকি আর হামলাই হোক মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে তিনি ও তার বাবা কিছুতেই ভয় পাবেন না। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও শামসুদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না। নাদিয়া জানান, পূর্ব লন্ডনের এই এলাকাটি বাবার জন্য নিরাপদ মনে করছেন না তাই তিনি সংবাদ সম্মেলনে বাবাকে আসতে দেননি।
ব্যারিষ্টার নাদিয়া চৌধুরী বলেন, গত বুধবার লন্ডনের হিথ্রো এয়ারপোর্টে নেমে লন্ডনন্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রটোকলের গাড়ীতে বাসায় ফেরার পথে ফোনে সাবেক ছাত্র ব্যারিষ্টার ডালটন তালুকদারের আমন্ত্রণে শামসুদ্দিন চৌধুরী বেথনালগ্রীন দুর্গাপূজা মন্ডপ পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে রাস্তায় গাড়িতে ওঠার সময় একজন লোক শামসুদ্দিন চৌধুরীর পরিচয় জানতে চান। ঝামেলা আঁচ করতে পেরে কোন উত্তর না দিয়ে বিচারপতি সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরো কয়েকজন এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা শামসুদ্দিন চৌধুরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। নাদিয়া বলেন, সেদিন তিনি সঙ্গে না থাকলে বাবা আজ কোথায় থাকতেন, তা তিনি জানেন না।
এর আগে ২০১২ সালের ২৭শে জুন লন্ডনে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবক কর্তৃক হামলার শিকার হন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। ২০০১ সালের ৩রা জুলাই বাংলাদেশের হাইকোর্ট বিভাগে নিয়োগ পাওয়া এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী গত সেপ্টেম্বরে আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে অবসরে যান। অবসরে যাবার কয়েকদিন আগেই প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অভিশংসন চেয়ে প্রেসিডেন্ট বরাবরে একটি চিঠি পাঠান বিচারপতি শামসুদ্দিন, যা গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে। এর আগে কটু মন্তব্যের কারণে তার অপসারণ চেয়ে ২০১২ সালে প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিনের এক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তুলেছিলেন।
হাইকোর্টের বিচারক থাকাকালে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী, কর্ণেল তাহেরের গোপন বিচার, বিজিএমইএ ভবন সংক্রান্ত মামলাসহ বহু আলোচিত রায় তার হাত দিয়ে আসে। তিনি প্রধান বিচারপতির অভিশংসন চেয়ে প্রেসিডেন্ট চিঠি দেয়ার পর এর নিন্দা জানিয়ে বিএনপি বলেছিল, বিচারপতি শামসুদ্দিনের পদক্ষেপ বিচার বিভাগের উপর আঘাত।
সম্প্রতি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবর্ধনায় বিচারপতি শামসুদ্দিন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে ইতিহাস বিকৃতি ঘটিয়েছেন বলেও বিএনপি অভিযোগ অভিযোগ করে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রায় দেয়া এই বিচারপতির অপসারণ চেয়ে সম্প্রতি এক আইনজীবী প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করেন। আদালতে স্পিকারকে নিয়ে শামসুদ্দিন চৌধুরীর একটি বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কয়েকজন সংসদ সদস্যও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। তবে স্পিকার এডভোকেট আবদুল হামিদ সংসদে রুলিং দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির দায়িত্ব প্রধান বিচারপতির হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।