ছাতকে ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে কওমী ও সুন্নী সমর্থকদের সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও পুলিশ উভয় পক্ষের দেড় শতাধিক লোক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অন্তত ৫০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে।
সোমবার দুপুরে শহরের জালালিয়া আলিম মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ মাদ্রাসা হতে থানা রোড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারসেল ও শর্টগানের ছুঁড়েছে। দফায়-দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় এক পর্যায়ে গোটা শহর পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। সুন্নী সমর্থকরা ছাতক হাইস্কুল মাঠে খাদিমুল ইসলাম আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের প্যান্ডেল ভাংচুর করে এবং কওমী সমর্থকরা হামলা করে জালালিয়া আলিম মাদ্রাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ফটক ভাংচুর করে।
জানা যায়, রবিবার জাউয়াবাজারে সুন্নী সমর্থকদের একটি সাটানো ব্যানার নামিয়ে ফেলায় সুন্নী ও কওমী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এর জের ধরে ছাতক হাইস্কুল মাঠে খাদিমুল ইসলাম আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে বাঁধা প্রদান করে সুন্নি সমর্থকরা। বিষয়টি তাৎক্ষনিক গণ্যমান্যদের মধ্যস্থতায় নিস্পত্তি হলেও চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল দু’পক্ষের মধ্যে।
সোমবার দুপুরে তালামিযে ইসলামিয়ার ব্যানারে একটি মিছিল মাদ্রাসায় প্রবেশ করলে কওমীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এক পর্যায়ে মাহফিলের প্যান্ডেল থেকে কওমীরা ও মাদ্রাসা থেকে সুন্নিরা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে শহরে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। খবর পেয়ে পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা এসে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষ চলাকালে শহরের ফুটপাতের ১৫-২০টি দোকান লুঠ ও তছনছ করা হয়। এক সময় কওমীরা শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ভাংচুরের তান্ডবলীলা চালায়। তারা শহরের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সংঘর্ষ পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিকাল সোয়া ৪টায় সুনামগঞ্জ থেকে র্যাব ও দাঙ্গা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। কিন্তু র্যাব-পুলিশ আসার আগেই পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কওমীদের হটিয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে দু’ ব্যাক্তি নিহত এবং পুলিশ, পথচারী, শিক্ষার্থীসহ উভয় পক্ষে দেড় শতাধিক লোক আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ ক’জন গুলিবিদ্ধও রয়েছে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত আব্দুল বাছিত বাবুল ও রুবেল মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মারা যায়। আহত লাহিন চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম তালুকদার, আব্দুল মতিন রাজন, কেডিএস এনামুল হোসেন, ফয়জুল ইসলাম ফজল, মাছম আহমদ, তারেক আহমদ, ইমরান হোসেন, মুক্তার হোসেন, হাফিজ মোস্তফা কামাল, মজলু মিয়া, নুর হোসেন, সেলিম আহমদ, রিপন মিয়া, জিতু মিয়া উপেন্দ্র দাসসহ অন্তত ৫০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এসআই শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, এসআই সোহেল রানাসহ অন্যান্য আহতদের ছাতক হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ছাতক থানার ওসি আশেক সুজা মামুন জানান বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।