রংপুর: আজ মঙ্গলবার রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও হত্যা মামলার রায় দেওয়া হবে ।
২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারী গ্রামে জাপানি নাগরিক হোসি কুনিও রিকশা যোগে তার ঘাসের খামারে যাবার পথে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় করার মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন ২৮ ফেব্রুয়ারি।
হোসি কুনিও হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্তা পেয়েছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। তদন্তকালে পুলিশ জঙ্গি সদস্য মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে। তিনি হোসি কুনিওকে হত্যার কথা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে মাসুদ তার অপর সহযোগীদের নামও প্রকাশ করেন। সেই মতে কাউনিয়া থানার পরিদর্শক মামুন-উর-রশিদ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১ জুলাই জেলার পীরগাছা উপজেলার মাসুদ রানা (আসামী ১), একই এলাকার এছাহাক আলী (আসামী ২), আবু সাঈদ (আসামী ৩, বগুড়া জেলার গাবতলী এলাকার লিটন মিয়া (আসামী ৪) এবং গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা হলদিয়ার চরের সাখাওয়াত হোসেনসহ (আসামী ৫) আট জঙ্গির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই বছর ৭ জুলাই আদালত তা গ্রহণ করেন।
আদালত ৬০ কার্যদিবসে মামলার মোট ৫৭ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। আসামী শনাক্তকরণ, সাফাই স্বাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনসহ মামলার সকল আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত খুনিদের খুঁজে বের করে তদন্ত শেষে চার্জশিট দিতে ১১ মাস সময় নেয় পুলিশ। তবে মাত্র সাত মাসেই বিচার কার্যক্রম শেষ করে এনেছেন আদালত।
আসামীদের মধ্যে মাসুদ রানা, এসাহাক আলী, সাখাওয়াত হোসেন, লিটন ও আবু সাঈদকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুই আসামী সাজ্জাদ আলী রাজশাহীতে এবং সাদ্দাম হেসেন ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। আরেক আসামি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু আনসারী পলাতক রয়েছেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট এ মামলায় জেএমবির ৮ জঙ্গির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ওই বছরের ১৩ অক্টোবর কাউনিয়া আমলি আদালত-২ এর বিচারক আরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে মামলাটি রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। পরে ২৬ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীর বিচারের জন্য মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। ১৫ নভেম্বর শুনানি শেষে বিশেষ জজ আদালত সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবুসোনা জানিয়েছেন, এ মামলার ৮ আসামীর মধ্যে আবু আনছারী পলাতক রয়েছেন এবং পঞ্চগড়ের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান গত বছরের ১ আগস্ট রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের সাদ্দাম হোসেন চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ঢাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। বাদীপক্ষের এ আইনজীবী মনে করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা হত্যা মামলাটি তারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাই তারা আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।