ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি বিভাগের দূরপাল্লার পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে অঘোষিত কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে ছেড়ে যাচ্ছে না কোন বাস। তবে ড্রাইভারদের এই কর্মবিরতির দায় নিচ্ছে না শ্রমিক ও মালিক সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাড়ি চালানো না চালানো ড্রাইভারদের একান্ত সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেয়া তাদের মৌলিক অধিকারের একটি। সম্প্রতি এক ড্রাইভারের যাবজ্জীবন ও ফাঁসির রায়ের পর তারা টার্মিনালে চাবি জমা দিয়ে গেছে। বলেছে তারা জেল খাটতে চায় না।’
মঙ্গলবার সরেজমিন মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে চোখে পড়ে ড্রাইভারদের অঘোষিত অবরোধের চিত্র। প্রায় কয়েকশ বাস টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় রাখা আছে। যাত্রীরা কেউ বসে, কেউ শুয়ে, কেউ আবার ব্যাগ হাতে টার্মিনালের সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন। বাসের কাউন্টারগুলো বন্ধ। কারণ জানতে চাইলে সবার একটাই কথা, তারা বাস বন্ধ করেননি। বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত একান্তই ড্রাইভারদের।
উল্লেখ্য, ঢাকার সাভারে ট্রাক চাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার চালক মীর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মনির নিহতের ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন মানিকগঞ্জের আদালত। এই রায় ঘোষণার পর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিভাগে অঘোষিত কর্মবিরতিতে গিয়েছে ড্রাইভাররা।
যাত্রীদের ভোগান্তি
দূরপাল্লার বাস বন্ধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের যাত্রীরা। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস ছাড়ার অপেক্ষায় মহাখালী টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন তারা। তবে কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি তো দূরের কথা কাউন্টারের আশপাশে বাস কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। নেই কোন ড্রাইভার।
কিশোরগঞ্জের যাত্রী নাজমুল হাসান মামুন বলেন, সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে উজান-ভাটি পরিবহনের কাউন্টারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছি। টিকেট বিক্রির কেউ নেই। কীভাবে টিকেট পাব সেকথাও কেউ বলতে পারছে না। ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেখা করে বৃদ্ধ আয়নাল দম্পতি সকাল ৬ টা থেকে ঘোষগাঁও যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিয়াম এন্টারপ্রাইজের সামনে বসে আছেন। কিন্তু কেউই জানেন না বাস কখন ছাড়বে, আদৌ আজ বাস ছাড়বে কিনা।
বাস ড্রাইভাররা যা বলছে
নাম প্রকাশ না করে নিরব ট্রাভেলসের এক ড্রাইভার বলেন, গত ৩ মাসে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। এর অন্যতম কারণ নসিমন-করিমনসহ অন্যান্য অননুমোদিত যানবাহন। একসঙ্গে ৭ থেকে ৮ জন বসে বেপরোয়াভাবে মহাসড়কে নসিমন চালায় তারা। আর দুর্ঘটনা হলে দোষ হয় আমাদের। ফুট ওভারব্রিজ বাদ দিয়ে সড়কে দৌড়াদৌড়ি করে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলেও দোষ হয় আমাদের। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তবেই মহাসড়কে বাস চলবে। মেধা এন্টারপ্রাইজের এক ড্রাইভার জানান, রায় স্থগিত না করা পর্যন্ত আমরা কেউই গাড়ি চালাবো না।
আর কতদিন চলবে ড্রাইভারদের অঘোষিত অবরোধ
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম জানান, আমরা যারা গাড়ির মালিক সবাই ব্যাংকের ঋণগ্রস্ত। গাড়ি বন্ধ থাকলে আমাদেরও লোকসান হয়। ড্রাইভারদের সম্পূর্ণ দোষ না থাকার পরও একজনকে ফাঁসি ও আরেকজনকে যাবজ্জীবন রায় দেয়া হল। এই রায়ের পর ড্রাইভাররা আমাদের কাছে এসে বলেছে, তারা যদি কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়, তাহলে তাদের পক্ষে আইনগত সহযোগিতা ও পরিবারের দায়ভার আমাদের বহন করতে হবে। এই চুক্তিতে গেলে তারা গাড়ি চালাতে রাজি হবে। যদি শ্রমিক ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে এই আন্দোলন হতো তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্তে আসতাম। কিন্তু তারা বলছে, এই ড্রাইভারদের কর্মবিরতিতে তাদের কোন ভূমিকা নেই।
বাস ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এমএ এন্টারপ্রাইজ, ইসলামী পরিবহন, উজান-ভাটি পরিবহন, নিরব ট্রাভেলস, আলম এশিয়া পরিবহনের মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা কেউই নির্দিষ্ট সময় বলতে পারেননি।