ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে

পাখি’র আঘাত ও খারাপ আবহাওয়াকে দায়ি করলেন পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ফায়ার কর্তৃপক্ষ

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:০৮:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • 93

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা- ছবি।।

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা- ছবি।।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার পর সেটি ধ্বংস হয়ে ১৭৯ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে মাত্র দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিমান দূর্ঘটনার কারণ হিসাবে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাখির আঘাতে অথবা খারাপ আবহাওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর ফ্লাইট ৭সি২২১৬-এর শেষ মিনিটে ঠিক কী ঘটেছিল, তা প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার কর্তৃপক্ষ।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে রানওয়ে ০১-এ অবতরণের জন্য অনুমতি পেয়েছিল। তবে, তার কিছুক্ষণ পর, সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে পাখির উপস্থিতির কারণে উড়োজাহাজের পাইলট সতর্ক হন। মাত্র দু মিনিট পর, ৮টা ৫৯ মিনিটে, পাইলট পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়টি জানিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
এরপর, ৯টা ১ মিনিটে পাইলট রানওয়ে পরিবর্তনের জন্য পুনরায় অনুমতি চেয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনুমতির পরে, ৯টা ২ মিনিটে উড়োজাহাজটি রানওয়ে ১৯-এ অবতরণ করতে শুরু করে। কিন্তু, অবতরণের সময় প্রায় এক হাজার ২০০ মিটার পর উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং বাঁধের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়।
অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত কাজ শুরু করলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরই বিমানবন্দর ফায়ার রেসকিউ ইউনিটের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি জীবিত যাত্রী উদ্ধার করতে সক্ষম হন। কিন্তু বাকিরা সবাই নিহত হন। উদ্ধারকারীরা এখনও নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারলেও আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
এ দুর্ঘটনায় বিমানের মোট যাত্রী ছিল ১৮১ জন, যার মধ্যে ১৭৯ জনই নিহত হয়েছেন। বিমানটিতে থাকা পাঁচজন ক্রু সদস্যের ৩জনই প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া দু’জনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এই দুর্ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিমান সেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত ও বিশ্লেষণ চলবে।
উল্লেখ্য, রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ভোরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুয়ানের উদ্দেশে রওনা হয় বিমানটি। স্থানীয় সময় ৯টা ২ মিনিটের দিকে এটি মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে একটি দেয়ালে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গেই এতে আগুন ধরে যায়।
ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার নেপথ্যে

পাখি’র আঘাত ও খারাপ আবহাওয়াকে দায়ি করলেন পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ফায়ার কর্তৃপক্ষ

আপডেট সময় : ০৩:০৮:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা- ছবি।।

 

দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকাল সকালে এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ার পর সেটি ধ্বংস হয়ে ১৭৯ জনের প্রাণ কেড়ে নেয়। দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে মাত্র দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিমান দূর্ঘটনার কারণ হিসাবে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাখির আঘাতে অথবা খারাপ আবহাওয়ার জন্য এই দুর্ঘটনা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আর ফ্লাইট ৭সি২২১৬-এর শেষ মিনিটে ঠিক কী ঘটেছিল, তা প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার কর্তৃপক্ষ।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৫৪ মিনিটে রানওয়ে ০১-এ অবতরণের জন্য অনুমতি পেয়েছিল। তবে, তার কিছুক্ষণ পর, সকাল ৮টা ৫৭ মিনিটে পাখির উপস্থিতির কারণে উড়োজাহাজের পাইলট সতর্ক হন। মাত্র দু মিনিট পর, ৮টা ৫৯ মিনিটে, পাইলট পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের বিষয়টি জানিয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
এরপর, ৯টা ১ মিনিটে পাইলট রানওয়ে পরিবর্তনের জন্য পুনরায় অনুমতি চেয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অনুমতির পরে, ৯টা ২ মিনিটে উড়োজাহাজটি রানওয়ে ১৯-এ অবতরণ করতে শুরু করে। কিন্তু, অবতরণের সময় প্রায় এক হাজার ২০০ মিটার পর উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং বাঁধের মধ্যে বিধ্বস্ত হয়।
অ্যাম্বুলেন্স ও উদ্ধারকারী দল দ্রুত কাজ শুরু করলেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরই বিমানবন্দর ফায়ার রেসকিউ ইউনিটের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তারা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন এবং ধ্বংসস্তূপ থেকে দুটি জীবিত যাত্রী উদ্ধার করতে সক্ষম হন। কিন্তু বাকিরা সবাই নিহত হন। উদ্ধারকারীরা এখনও নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারলেও আরও তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
এ দুর্ঘটনায় বিমানের মোট যাত্রী ছিল ১৮১ জন, যার মধ্যে ১৭৯ জনই নিহত হয়েছেন। বিমানটিতে থাকা পাঁচজন ক্রু সদস্যের ৩জনই প্রাণ হারিয়েছেন। জীবিত উদ্ধার হওয়া দু’জনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের শারীরিক অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
এই দুর্ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ায় সাম্প্রতিকতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিমান সেবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ বিষয়ে আরও তদন্ত ও বিশ্লেষণ চলবে।
উল্লেখ্য, রোববার (২৯ ডিসেম্বর) ভোরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক থেকে কোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মুয়ানের উদ্দেশে রওনা হয় বিমানটি। স্থানীয় সময় ৯টা ২ মিনিটের দিকে এটি মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে একটি দেয়ালে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গেই এতে আগুন ধরে যায়।