পাসপোর্ট অধিদপ্তরের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম পুরস্কৃতঃ মাহফুজুল আলম মাহফুজ
রাজধানীসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে ‘পাসপোর্ট সপ্তাহ-২০১৭’। ‘পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার, নিঃস্বার্থ সেবাই অঙ্গীকার’ স্লোগানে যার শুরু। ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আগামী ৩ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মাধ্যমে পালন করা হবে এই সপ্তাহ।
শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পাসপোর্ট সপ্তাহ উদ্বোধন করেন। উত্তরা পাসপোর্ট কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলামের হাতে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ২০১৬ সালের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তার পুরস্কার তুলে দেন। নিঃস্বার্থভাবে ও যত্নসহকারে দ্রুত পাসপোর্ট সেবা প্রদানে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় জনাব আজিজুল ইসলামের ভূয়সী প্রসংশা করেন।
শনিবার হতে দ্বিতীয়বারের মতো পাসপোর্ট সপ্তাহ উদযান শুরু করেছে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। গত বছরের ২৮ এপ্রিল দেশে প্রথম পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সপ্তাহে পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের দ্রুত সেবা প্রদান করার পাশাপাশি কোনো পেন্ডিং কাজ থাকলে তাও দ্রুত সম্পাদন করা হবে।
শ্রেষ্ঠ সেবা প্রদানের জন্য পুরস্কৃত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেই সুবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগের তুলনায় সেবা প্রদানে অনেক বেশি আন্তরিক হয়ে উঠেছেন। পাসপোর্ট সপ্তাহের প্রথম দিনে পাসপোর্ট অফিসের ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রদান করা হয় ডিজি অ্যাওয়ার্ড। পাসপোর্ট সপ্তাহ ঘিরে পুরো বছরের কাজের গতি আনয়ন এবং পাসপোর্টপ্রত্যাশীদের দ্রুত সময় পাসপোর্ট প্রদানের জন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী শ্রেষ্ঠ ই-সেবা প্রদানকারী ১৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের শ্রেষ্ট কর্মকর্তা নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আজ সরকার আমাকে যে পুরস্কৃত করেছে তা আমার কর্মক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আমি যেখানে গেছি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি মানুষকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে। আমার অফিসের আশপাশে দালালদের কখনো ভীড় করতে দেইনি। এছাড়া পাসপোর্ট নিয়ে যে কারও সমস্যা শোনার জন্য আমার কক্ষের দরজা সবসময় খোলা থাকে।
জনাব আজিজুল ইসলাম ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা সদর নিবাসী মরহুম হারুন অর রসিদ ও রুবিয়া রসিদ এর সব ছোট সন্তান। এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই রমনা থানার এডিশনাল এসপি জনাব আশরাফুল ইসলামের প্রেরণা ও গাইডেন্স তাকে সফল মানুষ হবার পেছনে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ছাত্র জীবনে বৃত্তি পাওয়া তুখোড় ছাত্র হিসেবে সফল এই মানুষ নটরডেম কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। এস এস সি পরীক্ষার ঠিক আগে পিতার আকষ্মিক অসুস্থতা এবং প্রথম বর্ষেই মাতার আকষ্মিক মৃত্যুর পর এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছিল পাহাড়সম কঠিন কাজ। কারণ সেই সময় শেষ সম্বল বাবাকে হারিয়ে সম্পূর্ণ এতিম হন এই মেধাবী আজিজুল ইসলাম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করা আজিজুল ইসলাম গত বছর কর্মরত ছিলেন গোপালগঞ্জে। সেখানে তিনি গোপালগঞ্জের সবচেয়ে ডায়নামিক কর্মকর্তা হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। স্কুল জীবন হতে তুখোড় মেধার পরিচয় রেখে চলেছেন তিনি। স্কুল ও কলেজ জীবন শেষ হবার আগেই মাতা এবং পরে পিতৃহীন হয়ে জনাব আজিজুল ইসলাম এই সফলতার কথা স্বরণ করে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
ত্রিশতম বিসিএস এ প্রথম বারেই নির্বাচিত হয়ে ২৩শে অক্টোবর ২০১২ সালে ইমিগ্রান্ট ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, আগারগাঁও, ঢাকা অফিসে যোগদান করেন। নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, রংপুর এবং ৬ মাসের অধিক মালয়েশিয়ায় একই দায়িত্ব পালন করেন। একসময় পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম ও অভিযোগের সুষ্ঠ ধারাবাহিকতা ফিরিয়ে আনতে জনাব আজিজুল ইসলামকে ডিজি মহোদয় তাঁর বতর্মান দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় পোষ্টিং করান যার উজ্জ্বল সাক্ষর রেখেছেন তিনি। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার এই কৃতি সন্তান তাঁর কর্মের স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের একটি রোল মডেল হয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নাম উজ্জ্বল করলো।