দেশের বাইরে বসবাস করা বাংলাদেশের নাগরিক এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হচ্ছে। প্রবাসীরা যেন রাষ্ট্রহীন হয়ে না পড়েনÑ সংশোধিত আইনে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী স্থানীয় সরকারের যে কোনো পদে প্রবাসীরা নির্বাচন করতে পারবেন। সুযোগ পাবেন রাজনৈতিক সংগঠন করারও। জানা গেছে, ভেটিং শেষে আইন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে এ সংশোধিত খসড়া চূড়ান্তও করে ফেলেছে।
বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশের নাগরিকদের বেশ কিছু ক্ষেত্রে অধিকারবঞ্চিত করেই নাগরিকত্ব আইন-২০১৬ এর চূড়ান্ত খসড়া পাস হয়েছিল মন্ত্রিসভায়। তবে বিভিন্ন মহলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনের আগে এ সুযোগ ছিল না। ইতিপূর্বে প্রস্তাবিত আইনটিতে ৫-এর (২) (ক) উপধারায় উল্লেখ ছিলÑ বংশসূত্রে নাগরিকত্ব অর্জনের জন্য জন্মের দুই বছর বা আইনটি বলবৎ হওয়ার দুই বছরের মধ্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে জন্মনিবন্ধন করতে হবে। তা ছাড়া এ ধারায় যেভাবে শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে, তাতে তৃতীয় প্রজন্মের প্রবাসী, যারা পৈতৃক সূত্রে নাগরিক হয়েছেন, তাদের বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। সংশোধিত আইনের খসড়ায় তা শিথিল করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থান করা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের প্রত্যেকেই বংশসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন।
নাগরিকত্ব আইন ২০১৬ এর (২) (গ) উপধারার বিধান মতে, কেবল বাংলাদেশ সরকারের অধীন কিংবা প্রেষণে বা লিয়নে কোনো দেশে চাকরিতে যারা নিয়োজিত থাকেন, সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের সন্তানের জন্ম হলে ওই সন্তান বাংলাদেশের নাগরিক হবে। নতুন সংশোধিত আইনে সরকারের অধীন ছাড়া অন্য নাগরিকদের বেলায়ও এটি প্রযোজ্য হবে। এমনকি বাংলাদেশি নাগরিক নন কিন্তু তার পিতা বা মাতা অথবা পিতামহ বা মাতামহ বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন, এমন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হবেন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
আইন অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা সুপ্রিমকোর্টের বিচারকসহ প্রজাতন্ত্রের কোনো কাজে নিয়োগ লাভ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য পদ ও রাষ্ট্রপতি পদে তারা নির্বাচন করতে পারবেন না। বাংলাদেশের কোনো নাগরিক সার্কভুক্ত দেশ (ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান); প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য নিষিদ্ধঘোষিত রাষ্ট্রের (যেমন ইসরায়েল) দ্বৈত নাগরিক হতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এমন সব দেশের দ্বৈত নাগরিক হতে পারবেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিসভা নাগরিকত্ব আইন ২০১৬-এর খসড়াটি অনুমোদন করে, যা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়।
বিভিন্ন ধারা সংশোধনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আমরা ভেটিংয়ের সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিদেশে জন্ম নেওয়া কোনো বাংলাদেশির সন্তানের নাগরিকত্ব পেতে হলে জন্মনিবন্ধন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো সময় বেঁধে দেওয়া থাকবে না। এ ছাড়া এ ধারায় বলা ছিল, কোনো ব্যক্তি বংশসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হবেন না যদি তার পিতা বা মাতা তার জন্মকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীন কিংবা প্রেষণে বা লিয়নে অন্যত্র চাকরিতে নিয়োজিত না থাকেন। এ ধারাটিও তুলে দেওয়া হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, আইনে এমন কোনো ধারা রাখা হবে না, যাতে প্রবাসীরা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েন। অন্য যে দেশের নাগরিকই হোক, তাদের সব সম্পত্তির ওপর অধিকার থাকবে প্রবাসীদের। এমন কোনো আইন হবে না, যা জনবান্ধব নয়।
আইনটি নিয়ে কাজ শুরুর সময় তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি বর্তমানে ভেটিংয়ে আছে। শিগগিরই সংশোধিত চূড়ান্ত আইনটি পাস হবে