ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন ২৭ হাজার ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করেছে ড্রাইভার অ্যান্ড ভেহিকল লাইসন্সিং এজেন্সি (ডিভিএলএ)। অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের ব্রিটেন থেকে বিতাড়নের কৌশল হিসেবে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ডিভিএলএ’র সাথে তথ্য বিনিময় শুরু করে হোম অফিস। এর ফলে এই লাইসেন্স বাতিলের ঘটনা ঘটে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের ধরপাকড়ে লাইসেন্সিং তথ্যকে কাজে লাগানো হচ্ছে জানিয়ে বিবিসির এক খবরে বলা হয়, তথ্য অধিকার আইনের অধীনে বিবিসি সাউথ ইস্ট শো-এর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার লাইসেন্স বাতিলের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। যেসব ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তারা কেউ কেউ অবৈধ উপায়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন। আবার অনেকে বৈধ উপায়ে ব্রিটেনে এসেছেন এবং বৈধ থাকা অবস্থায় লাইসেন্স করেছেন। কিন্তু এরপর তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে বা ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। কিন্তু তারা অবৈধভাবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন।�প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে জুলাই মাসে হোম অফিস অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের তথ্য আদান-প্রদান শুরু করলে ওই মাসেই ৩ হাজার ৫শ ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হয়। এরপর থেকে লাইসেন্স বাতিলের ওই সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে। অবৈধ ইমিগ্রেন্ট বিবেচনায় ২০১৫ সালে মোট ৯ হাজার ৭শ ব্যক্তির লাইসেন্স বাতিল হয়। আর ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে হয় ১১ হাজার ৯শ।�২০১০ সালে কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্রিটেনে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর সব নিয়ম চালু করে। সেইসঙ্গে অবৈধভাবে যারা ব্রিটেনে বসবাস করছে, তারা যাতে নিজ তাগিদেই ব্রিটেন ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়, সেজন্য ২০১৪ সালে চালু হওয়া অভিভাসন আইনের মাধ্যমে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।�যার মধ্যে আছে বাড়িভাড়া নিতে গেলে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস চেক করা। অবৈধদের ভাড়া দেয়ার দায়ে বাড়িওয়ালার জরিমানা করা। ৬ মাসের বেশি যারা ব্রিটেনে বসবাস করবেন তাদের জন্য স্বাস্থ্য ফি (হেলথ সারচার্জ) বাধ্যতামূলক করা এবং অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থা করা। এছাড়া ক্ষতিকর বিবেচনায় যেকোনো অভিবাসীকে কোনো ধরনের আইনী সহায়তার সুযোগ না দিয়েই বিতাড়নের (ডিপোর্ট) নিয়ম যুক্ত করা হয়। এসব নিয়মের উদ্দেশ্য অবৈধ ইমিগ্রেন্টরা যাতে কোনোভাবেই ব্রিটেনে উপার্জন, চিকিৎসা সর্বোপরি জীবনযাপন করতে না পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করা।
ব্রিটেনে ড্রাইভিং লাইসেন্স কেবল গাড়ি চালানোর জন্য নয়, এটি ব্যাংক একাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে চাকরি বাকরি নেয়ার মত প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে একটি সর্বজন গৃহিত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। পাসপোর্টের পরই এর অবস্থান। অবৈধ ইমিগ্রেন্টরা যাতে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে না পারেন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সকে পরিচয়পত্র হিসেবে দেখিয়ে কোথাও কোনো সেবা নিতে যেতে না পারেন- তা নিশ্চিত করতে অবৈধদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেয় সরকার।�বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, যখন কোনো ব্যক্তি যুক্তরাজ্যে অবৈধ হয়ে পড়েন তখন তার তথ্য ডিভিএলএ-কে জানিয়ে দেয় হোম অফিস। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নামে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে তাহলে ডিভিএলএ- লাইসেন্স বাতিলের তথ্য জানিয়ে ওই ব্যক্তিকে চিঠি পাঠায়। তবে সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ১০ দিনের সময় পান। ডিভিএলএ-লাইসেন্স বাতিল করার তথ্যটি পুলিশ কর্তৃপক্ষকেও জানিয়ে দেয়। এরপর রাস্তায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটক করে অথবা হোম অফিসকে খবর দেয়। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫৮৩জনকে হোম অফিস ডিপোর্ট করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।�২০১৫ সালে লাইসেন্স বাতিলের কারণগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরা হয় বিবিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের কারণে লাইসেন্স বাতিল হয় ৯ হাজার ৭৮২টি। একই বছর স্বাস্থ্যগত কারণে (মেডিকেল গ্রাউন্ডে) লাইসেন্স বাতিল হয় ৪৭ হাজার। আর ড্রাইভিং অপরাধের দায়ে অযোগ্য বিবেচিত হওয়ার কারণে ৯৮ হাজার লাইসেন্স বাতিল হয়।�চীফ ইন্সপেক্টর অব বর্ডার্স ডেভিড বো? অবৈধ বিতাড়নে হোম অফিসের নেয়া পদক্ষেপের মূল্যায়ন তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি বলেন যে, অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য হোম অফিসের হাতে নেই। এরফলে সকল অবৈধ ইেিমগ্রেন্টের ড্রাইভিং লাইসেন্স যে বাতিল করা যাচ্ছে, তা বলা যাবে না। আবার ভুলক্রমে অনেক বৈধ অভিবাসীও লাইসেন্স বাতিলের শিকার হয়ে ভুক্তভোগী হচ্ছেন। হোম অফিসের এক মূখপাত্র বলেন, ‘আমরা যে অবৈধ ইমিগ্রেন্টদের জীবন যাপন কঠিন করে তুলছি-এই পরিসংখ্যান তারই প্রমাণ’।
সংবাদ শিরোনাম ::
ব্রিটেনে ২৭ হাজার অবৈধ ইমিগ্রান্টের লাইসেন্স বাতিল
-
প্রতিনিধি
- আপডেট সময় : ০৩:৫৭:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
- 268
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ