ঢাকা : ‘সুন্দরবন বাঁচাও’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভারতের রোষানলে পড়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল৷ ফলে কলকাতায় থাকা তার অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যেতে পারছেন না তিনি৷
সুন্দরবনের কাছে রামপালে ভারতের সহায়তায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের অনেক অ্যাক্টিভিস্ট৷ তাঁদের দাবি, এর ফলে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে৷ তাই সুন্দরবন বাঁচাতে রামপালের কাছে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের বিরোধী তাঁরা, যদিও সরকারের কথায় সুন্দরবনের ক্ষতি এড়াতে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হবে৷
মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সুলতানা কামাল সরকারের এই বক্তব্য আশ্বস্ত নন৷ বরং নেদাল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে রবিবার ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেন তার উদ্বেগের কারণগুলো৷ সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পর্কে তিনি জানান, “বিষয়টি – ‘আমি তোমার শরীরে বিষ ঢোকাবো ঠিকই, কিন্তু সেই বিষে বিষক্রিয়া যাতে না হয় সেই চেষ্টাও করবো’-র মতো ব্যাপার৷”
সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, রামপালে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করে সুন্দরবনকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা হবে৷ কিন্তু সুলতানা কামাল জানান, এ রকম কোনো প্রযুক্তি আসলে ব্যবহার করা হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে৷ কেননা প্রকল্পের কাগজপত্রে বা যেসব সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে, তাতে এই প্রযুক্তির কথা উল্লেখ নেই৷
তার কথায়, “আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করলে কয়লার ব্যবহার কমবে, সেটাই একমাত্র মহাত্ব, আর কিছু নয়৷ কিন্তু এরফলে বিষাক্ত গ্যাসের নিঃসরণ কমানো যাবে না৷ মোটের উপর এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এমন কোনো প্রমাণও আমরা পাইনি৷”
প্রসঙ্গত রামপাল বিরোধী আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ভারতবিরোধী, স্বাধীনতার বিপক্ষের এবং উন্নয়ন বিরোধী বলে জানিয়েছেন সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রী৷ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন সুলতানা কামাল৷ তাকে স্বাধীনতার বিরোধী প্রমাণ করতে পারলে সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি৷
শুধু তাই নয়, ভারতবিরোধীতার বিষয়েও কথা বলেছেন বর্তমানে ফ্রিডম বুকফেয়ারে অংশ নিতে দ্য হেগে অবস্থানরত এই মানবাধিকার কর্মী৷ তিনি জানান, সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলন করায় সম্প্রতি তাকে ভিসা দেয়নি ভারত৷
তিনি বলেন, “আমার ভাসুর কলকাতায় থাকেন, তিনি অসুস্থ৷ অথচ তাকে আমি দেখতে যেতে পারছি না, কারণ রামপালবিরোধী আন্দোলন করায় ভারত আমাকে ভিসা দেয়নি৷
সুলতানা কামালের কথায়, “ভারতের এই যে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করা…৷ আমাদের জাতীয় ইস্যু নিয়ে যখন কথা বলছি, সেটার মধ্যে অনাকাঙ্খিতভাবে একটা পরিস্থিতি তৈরি করা, এগুলো যদি তারা করতে থাকে, একে একে অনেক মানুষই ভারতবিরোধী হয়ে যাবে৷ বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসী, অযৌক্তিক এবং দাদাগিরির যে মনোভাব রয়েছে, সেটার কারণে৷”
ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারটি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়৷ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন সুলতানা কামাল৷ তিনি বলেন, “যারা মুক্তভাবে কথা বলতে চায়, তাদের সঙ্গে আমাদের অমত থাকতে পারে৷ যাদের ব্লগার বলছি, তাদের অনেকেই অনেককিছু লেখে, যার সঙ্গে আমিও সবসময় একমত হই না, অনেকেই হবেন না৷ অনেকের সেটা ভালো নাও লাগতে পারে৷ কিন্তু একটা সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে, একটা নিয়মনীতি থাকে যে তারা তাদের কথাবার্তা বলুক…৷ আমাদের পছন্দ না হলে আমরা দৃঢ়ভাবে, স্পষ্টভাবে বলি যে এটা আমাদের পছন্দ হচ্ছে না৷ কিন্তু এখানে সহিংসতার কোনো জায়গা থাকতে পারে না৷”
তিনি আরো বলেন, “যারা এই সমস্ত হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটাচ্ছে, তারা কী বলে এগুলো ঘটাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে যতটা না দাঁড়াচ্ছি, তার থেকেও আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, তারা যেহেতু সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে এটা করছে, সেইজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে৷”
বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর হেফাজতে ইসলামকে সাথে রাখার বিপজ্জনক কৌশলেরও সমালোচনা করেন সুলতানা কামাল৷ জানান, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের উচিত সাধারণ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা, কোনো উগ্রপন্থি ইসলামি দলের প্রতি নয়৷ -ডয়চে ভেলে।