ঢাকা ১০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি নিয়ে কৃষকরা কেন ক্ষুব্ধ?

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৮
  • 367

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি তৈরি হয়েছে ভারতে, যার উদ্বোধন হবে ৩১ অক্টোবর। ১৮২ মিটার উচ্চতার এ মূর্তিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে শত শত মিলিয়ন ডলার। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই মূর্তিটির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ বা ‘ঐক্যের মূর্তি’। কিন্তু এ মূর্তিটি নিয়ে এখন ক্ষোভ বিক্ষোভ চরমে উঠেছে গুজরাটের কৃষকদের মাঝে।

গুজরাটের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকার কৃষক ভিজেন্দ্র তাদবী অনেক দিন ধরেই তার প্রায় তিন একর জমির সেচের পানির জন্য প্রচণ্ড কষ্ট করছেন। যে কারণে তিনি তার ক্ষেতে মরিচ, ভুট্টা আর বাদামের চাষ করতে পারছেন না। ভিজেন্দ্র তাদবীরের মতো লাখ লাখ কৃষকের আজ একই অবস্থা। চাষাবাদের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর তাদের অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের শুষ্কতার কারণে ফসল ফলাতে না পেরে তাদের আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এ কারণে তাদবী কোনো উপায় না পেয়ে একটি নির্মাণ প্রকল্পের গাড়ি চালকের কাজ নেন। সেটি হলো গুজরাট সরকারের বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি বানানোর প্রকল্প। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার, যার অর্ধেকই দিচ্ছে গুজরাট সরকার। আর এখানেই আপত্তি ভিজেন্দ্র তাদবীরের। তিনি বলেন, “বড় মূর্তি বানাতে এতো অর্থ ব্যয় না করে সরকারের উচিত এটি কৃষিখাতে ব্যয় করা”। ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি বানানোর কাজ শেষ, তবে তাদবী গাড়ি চালক হিসেবেই আরও কাজ পেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও অসংখ্য কৃষকের মতো চরম অসন্তুষ্ট তিনি।

প্যাটেল মেমোরিয়ালের আওতায় মূর্তি ছাড়াও একটি তিন তারকা হোটেল, একটি জাদুঘর ও একটি গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।আর এসবই হয়েছে তাদবীরের গ্রাম থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র ও উপজাতীয়।বহু মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। যদিও সরকার বলছে এ মূর্তিটিই ওই জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে। কারণ তাদের আশা বছরে অন্তত পঁচিশ লাখ মানুষ মূর্তিটি দেখতে সেখানে যাবে। কিন্তু এসব কথার ওপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না সেখানকার কৃষকরা।

তাদের বক্তব্য, মূর্তি বানাতে এতো টাকা খরচ হয়, অথচ তাদের প্রাণ আজ যেতে চলেছে, সেখানে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অন্য আরেকজন কৃষক বলেন, যেখানে বছরে তাদের তিনবার ফসল হতো, এখন একবার ফসল ফলাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। শুধুমাত্র পানি সমস্যার কারণেই তাদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যদিও জেলা কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার তাদের পানি সংকট নিরসনে সবধরনের পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব কথা তাদের মন ভরাতে পারছে না। তারা বলছেন, চোখের সামনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে মূর্তি বানানো হচ্ছে, অথচ সেচের পানির অভাবে তারা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরছেন।—বিবিসি বাংলা।

ট্যাগস :

ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি নিয়ে কৃষকরা কেন ক্ষুব্ধ?

আপডেট সময় : ০১:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তিটি তৈরি হয়েছে ভারতে, যার উদ্বোধন হবে ৩১ অক্টোবর। ১৮২ মিটার উচ্চতার এ মূর্তিটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে শত শত মিলিয়ন ডলার। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই মূর্তিটির নাম ‘স্ট্যাচু অব ইউনিটি’ বা ‘ঐক্যের মূর্তি’। কিন্তু এ মূর্তিটি নিয়ে এখন ক্ষোভ বিক্ষোভ চরমে উঠেছে গুজরাটের কৃষকদের মাঝে।

গুজরাটের পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি এলাকার কৃষক ভিজেন্দ্র তাদবী অনেক দিন ধরেই তার প্রায় তিন একর জমির সেচের পানির জন্য প্রচণ্ড কষ্ট করছেন। যে কারণে তিনি তার ক্ষেতে মরিচ, ভুট্টা আর বাদামের চাষ করতে পারছেন না। ভিজেন্দ্র তাদবীরের মতো লাখ লাখ কৃষকের আজ একই অবস্থা। চাষাবাদের জন্য মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর তাদের অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের শুষ্কতার কারণে ফসল ফলাতে না পেরে তাদের আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

এ কারণে তাদবী কোনো উপায় না পেয়ে একটি নির্মাণ প্রকল্পের গাড়ি চালকের কাজ নেন। সেটি হলো গুজরাট সরকারের বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি বানানোর প্রকল্প। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিনশ মিলিয়ন ডলার, যার অর্ধেকই দিচ্ছে গুজরাট সরকার। আর এখানেই আপত্তি ভিজেন্দ্র তাদবীরের। তিনি বলেন, “বড় মূর্তি বানাতে এতো অর্থ ব্যয় না করে সরকারের উচিত এটি কৃষিখাতে ব্যয় করা”। ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি বানানোর কাজ শেষ, তবে তাদবী গাড়ি চালক হিসেবেই আরও কাজ পেয়েছেন। কিন্তু তারপরেও অসংখ্য কৃষকের মতো চরম অসন্তুষ্ট তিনি।

প্যাটেল মেমোরিয়ালের আওতায় মূর্তি ছাড়াও একটি তিন তারকা হোটেল, একটি জাদুঘর ও একটি গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে।আর এসবই হয়েছে তাদবীরের গ্রাম থেকে দশ কিলোমিটার দূরে। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র ও উপজাতীয়।বহু মানুষ ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। যদিও সরকার বলছে এ মূর্তিটিই ওই জেলার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলবে। কারণ তাদের আশা বছরে অন্তত পঁচিশ লাখ মানুষ মূর্তিটি দেখতে সেখানে যাবে। কিন্তু এসব কথার ওপর বিন্দুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না সেখানকার কৃষকরা।

তাদের বক্তব্য, মূর্তি বানাতে এতো টাকা খরচ হয়, অথচ তাদের প্রাণ আজ যেতে চলেছে, সেখানে সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অন্য আরেকজন কৃষক বলেন, যেখানে বছরে তাদের তিনবার ফসল হতো, এখন একবার ফসল ফলাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। শুধুমাত্র পানি সমস্যার কারণেই তাদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যদিও জেলা কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার তাদের পানি সংকট নিরসনে সবধরনের পদক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব কথা তাদের মন ভরাতে পারছে না। তারা বলছেন, চোখের সামনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে মূর্তি বানানো হচ্ছে, অথচ সেচের পানির অভাবে তারা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরছেন।—বিবিসি বাংলা।