ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আর কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তির পথে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্তানের জন্য সব থেকে বড়ো বন্ধু হবেন ‘মা’। মা’য়ের কাছে সন্তান যেন নির্দ্বিধায় তার যে কোন সমস্যার কথা বলতে পারে সেই ধরনের একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যেটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা কথা মা-বোনদের বলে রাখি- বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোন স্থান নাই। মাদকাশক্তি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। ‘এ জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ছেলে-মেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে’, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
প্রধানমন্ত্রী নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেদেরকে কখনও অপাংতেয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক কর্মী তাদের একটাই লক্ষ্য থাকতে হবে- রাজনীতির মধ্যদিয়ে আমরা জনগণকে কি দিতে পারলাম। মানুষ কি দিতে পারলাম এবং আমাদের মা-বোনেরা, তাদের কাছে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যেতে হবে।
তাদের জন্য আমরা যে কাজগুলো করেছি সেগুলো তাদেরকে বলতে হবে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একটা জিনিষ আমাদের মা-বোনদের বলব, একটা জিনিস আপনারা জানেন- আজকে শুধু বাংলাদেশ না সমগ্র বিশ্বে একটা নতুন উপসর্গ হচ্ছে জঙ্গিবাদের আবির্ভাব।
সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন।এ সময় সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এরপরই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শিরিন রোকসানা। এরপরই শোক প্রস্তাবে আনা নিহতদের, একাত্তরের শহীদ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ নিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুননেছা মোশাররফ।সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন।শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা এমপি।সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি।
শেখ হাসিনা নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে নারীরাও কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা মায়ের জাত আর ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ হত্যা করে কিভাবে তারা ইসলাম ধর্ম পালন করছে আমি জানি না।
যারা এরকম নিরীহ মানুষ হত্যা করবে তাদের স্থান কখনও বেহেশেতে হতে পারে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ হত্যা মহাপাপ, মানুষ হত্যাকারীর স্থান হবে দোজখে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী ভাই-বোনদের আমি বলব আপনারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা এসেছেন- তারা নিজ নিজ পরিবারে লক্ষ্য রাখবেন ছেলে-মেয়রা কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে, কি করে, পড়াশোনা ঠিকমতো করছে কিনা, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যাচ্ছে কি না, নিশ্চই সেটার খবর রাখতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস মোকাবেলায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে আহবান করেছি এবং ঐক্যবদ্ধ করেছি। সেখানে অভিভাবক, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ওলামা মাশায়েখগণসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যার নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ এবং মাদকাশক্তির পথে যেন তারা না যায়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আপনারা দেখেছেন তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা কোথায় চলে গেছে। সারাদেশে ৩ হাজার ৩৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ এবং সাড়ে ৩শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্কুল ছাত্র অনিক আর হৃদয়কে আমি চিকিৎসা করাচ্ছি। যতই চিকিৎসা করাই তাদের দেখলে কষ্ট লাগে- বোমার আঘাতে তাদের সৃষ্ট ক্ষত সারাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ৬ বছরের শিশু রুপা, অন্তস্বত্তা নারী মনোয়ারা বেগম, স্কুল শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ঝর্ণাও বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রেহাই পায় নাই।