ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটবাসীর দাবি ‘লিটু সাব; অইতো… আরো অইতো…

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৫:০৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭
  • 372


সিলেট ।।টানা দশ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব প্রখ্যাত বাউল শিল্পী শফি মণ্ডলের গানের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে পর্দা নামে। এটি ছিলো সিলেট’র ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব। বিদায়লগ্নে এরকম উৎসব নিয়মিতভাবে আয়োজন করার দাবি জানিয়ে হাজারো দর্শক বলেছেন ‘অইতো… অইতো… লিটু সা’ব অইতো…’।

শুক্রবার শেষলগ্নে বাউল শফি মণ্ডলের গানের সাথে সাথে উল্লাসরত তরুণ যুবাদের মুখে মুখে বেশ জোরেশোরেই ছিল সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার প্রিয় আওয়াজটি।

এর আগে উৎসবের মূলমঞ্চে বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন- বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। সংস্কৃতির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। সিলেটের সকল মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমেই বেঙ্গল উৎসব সার্থকভাবে শেষ হচ্ছে। এর জন্য তিনি সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জানান।

বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রশংসা করেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী। তিনি দেশের বিভিন্ন বিভাগেও এ ধরণের আয়োজন করার অনুরোধ জানান আয়োজকদের প্রতি।

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সিলেটের অবদান অসামান্য। এখানকার মনিপুরী, খাসিয়াসহ অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী দেশের সংস্কৃতিতে অবদান রেখে চলেছেন। সিলেটের গর্ব হাসন রাজা, রাধারমন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমও তাদের কৃর্তির জন্য অমর হয়ে আছেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এরকম অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে তার ফাউন্ডেশন। সিলেটের দর্শকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে লিটু সফল সমাপ্তির সকল অর্জন সিলেটবাসীর যোগ করেন।

শেষদিনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা খানম, ড. একেএম মোমেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরসহ সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।

সমাপনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর হাছন রাজা মঞ্চে শুরু হয় শেষ দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। শেষলগ্নে সিলেটবাসীর কণ্ঠজুড়ে ছিল ‘অইতো… অইতো…। লিটু ভাই অইতো, আরো অইতো…।’

একপ্রান্ত থেকে ‘অইতো’ সুর ওঠলে সেটা ছড়িয়েছে কমপ্লেক্সের পুরো প্রান্তে। বাউল শিল্পী শফি মণ্ডল যখন শাহ্ আবদুল করিমের ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে… ’ আরম্ভ করলেন তখন সবাই সমস্বরে উচ্ছ্বাস সেই চেনা আওয়াজে।

এমন উল্লাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে সিলেটে এরকম বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়মিত রাখার দাবি জানালেন সিলেট তরুণ সমাজ। ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেদ খান, কবির আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল আলম শাহীনসহ অনেকেরই এমন দাবি। তাদের সাথে সুর মেলালেন ডাক্তার আবুল হাসনাত, ডা. সোনিয়াসহ বেশক’জন।

সিলেটের কৃতিসন্তান বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের গান গেয়ে শফি মণ্ডল মাতিয়ে তুলেছিলেন পুরো কমপ্লেক্সগ্রাউন্ড। একে একে তিনি গেয়ে শোনান- দিল কি দয়া হয় না, কানার হাট বাজার, আমার একটা নদী ছিল, তোমায় হৃদমাজারে রাখিব ছেড়ে দিবনা সহ বেশক’টি জনপ্রিয় গান।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল দশ দিনব্যাপী এ উৎসবটি। বাঙালি সংস্কৃতির নানা কৌণিক দিক প্রতিফলিত করার প্রয়াসে ‘মানবিক সাধনায়’ স্লোগান নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ সংস্কৃতি উৎসব ছিল সিলেটের ইতিহাসেব সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক আয়োজন।

নগরীর আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্মরণিয় হয়ে থাকবে বেঙ্গল উৎসবের সূত্র ধরে। শুরুর দিন থেকেই মন জুড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের ভীড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে আয়োজকদের।

অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকা বিশিষ্ট অভিনেতা শহিদুল আলম সাচ্চু বলেন- সিলেটের মানুষ অনেক ভালো, সংস্কৃতিপ্রেমী। সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজনটি সার্থকভাবে সমাপ্ত করতে পেরেছে।

ট্যাগস :

সিলেটবাসীর দাবি ‘লিটু সাব; অইতো… আরো অইতো…

আপডেট সময় : ০৫:০৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ মার্চ ২০১৭


সিলেট ।।টানা দশ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য উৎসব প্রখ্যাত বাউল শিল্পী শফি মণ্ডলের গানের মধ্যে দিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে পর্দা নামে। এটি ছিলো সিলেট’র ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব। বিদায়লগ্নে এরকম উৎসব নিয়মিতভাবে আয়োজন করার দাবি জানিয়ে হাজারো দর্শক বলেছেন ‘অইতো… অইতো… লিটু সা’ব অইতো…’।

শুক্রবার শেষলগ্নে বাউল শফি মণ্ডলের গানের সাথে সাথে উল্লাসরত তরুণ যুবাদের মুখে মুখে বেশ জোরেশোরেই ছিল সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার প্রিয় আওয়াজটি।

এর আগে উৎসবের মূলমঞ্চে বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

তিনি বলেন- বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে। সংস্কৃতির মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। সিলেটের সকল মানুষের সহযোগিতার মাধ্যমেই বেঙ্গল উৎসব সার্থকভাবে শেষ হচ্ছে। এর জন্য তিনি সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জানান।

বেঙ্গল সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের জন্য বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রশংসা করেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী। তিনি দেশের বিভিন্ন বিভাগেও এ ধরণের আয়োজন করার অনুরোধ জানান আয়োজকদের প্রতি।

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সিলেটের অবদান অসামান্য। এখানকার মনিপুরী, খাসিয়াসহ অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী দেশের সংস্কৃতিতে অবদান রেখে চলেছেন। সিলেটের গর্ব হাসন রাজা, রাধারমন, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমও তাদের কৃর্তির জন্য অমর হয়ে আছেন।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, এরকম অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে তার ফাউন্ডেশন। সিলেটের দর্শকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে লিটু সফল সমাপ্তির সকল অর্জন সিলেটবাসীর যোগ করেন।

শেষদিনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার নাজমানারা খানম, ড. একেএম মোমেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরসহ সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন।

সমাপনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর হাছন রাজা মঞ্চে শুরু হয় শেষ দিনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। শেষলগ্নে সিলেটবাসীর কণ্ঠজুড়ে ছিল ‘অইতো… অইতো…। লিটু ভাই অইতো, আরো অইতো…।’

একপ্রান্ত থেকে ‘অইতো’ সুর ওঠলে সেটা ছড়িয়েছে কমপ্লেক্সের পুরো প্রান্তে। বাউল শিল্পী শফি মণ্ডল যখন শাহ্ আবদুল করিমের ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে… ’ আরম্ভ করলেন তখন সবাই সমস্বরে উচ্ছ্বাস সেই চেনা আওয়াজে।

এমন উল্লাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে সিলেটে এরকম বর্ণাঢ্য আয়োজন নিয়মিত রাখার দাবি জানালেন সিলেট তরুণ সমাজ। ব্যাংক কর্মকর্তা রাশেদ খান, কবির আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল আলম শাহীনসহ অনেকেরই এমন দাবি। তাদের সাথে সুর মেলালেন ডাক্তার আবুল হাসনাত, ডা. সোনিয়াসহ বেশক’জন।

সিলেটের কৃতিসন্তান বাউল সম্রাট শাহ্ আবদুল করিমের গান গেয়ে শফি মণ্ডল মাতিয়ে তুলেছিলেন পুরো কমপ্লেক্সগ্রাউন্ড। একে একে তিনি গেয়ে শোনান- দিল কি দয়া হয় না, কানার হাট বাজার, আমার একটা নদী ছিল, তোমায় হৃদমাজারে রাখিব ছেড়ে দিবনা সহ বেশক’টি জনপ্রিয় গান।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছিল দশ দিনব্যাপী এ উৎসবটি। বাঙালি সংস্কৃতির নানা কৌণিক দিক প্রতিফলিত করার প্রয়াসে ‘মানবিক সাধনায়’ স্লোগান নিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ সংস্কৃতি উৎসব ছিল সিলেটের ইতিহাসেব সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক আয়োজন।

নগরীর আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্মরণিয় হয়ে থাকবে বেঙ্গল উৎসবের সূত্র ধরে। শুরুর দিন থেকেই মন জুড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের ভীড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে আয়োজকদের।

অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকা বিশিষ্ট অভিনেতা শহিদুল আলম সাচ্চু বলেন- সিলেটের মানুষ অনেক ভালো, সংস্কৃতিপ্রেমী। সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতার মাধ্যমে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজনটি সার্থকভাবে সমাপ্ত করতে পেরেছে।