রাশিয়ার উপকূলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭। এরপর জাপানসহ একাধিক দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
আর এই সতর্কতার মধ্যেই জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের সকল কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুনামি সতর্কতার কারণে সব কর্মীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির (টেপকো) এক মুখপাত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানান, “আমরা সব কর্মী ও স্টাফদের সরিয়ে নিয়েছি”। তিনি আরও বলেন, “পারমাণবিক কেন্দ্রে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যায়নি।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে উত্তর-পূর্ব জাপানের উপকূলের কাছে ৯ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানার পর সৃষ্ট সুনামিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পাওয়ার ও কুলিং সিস্টেম ধ্বংস হয়ে যায়। এতে ছয়টি রিঅ্যাক্টরের মধ্যে তিনটি গলে (মেল্টডাউন) যায়। যার কারণে এটি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনায় পরিণত হয়।
এর আগে রাশিয়ার উপকূলে ৮.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর একাধিক দেশে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। বুধবার ভোরে রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের কামচাটকা অঞ্চলে প্রায় চার মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস দেখা যায়।
জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের পুরো পশ্চিম উপকূলজুড়ে বিপজ্জনক ঢেউয়ের সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত তাইওয়ানও সুনামি সতর্কতা জারি করেছে। রাশিয়ার কামচাটকা অঞ্চলের গভর্নর ভ্লাদিমির সলোডভ টেলিগ্রামে এক ভিডিও বার্তায় জানান, এটি “গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প”।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলু জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, “বিধ্বংসী সুনামি ঢেউয়ের” আশঙ্কা রয়েছে এবং কিছু উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাপানের কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, তাদের উপকূলীয় অঞ্চলে তিন মিটার পর্যন্ত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল পেট্রোপাভলোভস্ক-কামচাটস্কির পূর্বে ১৩৬ কিলোমিটার দূরে।
এর কিছুক্ষণ পর রাশিয়ার একই অঞ্চলের পেট্রোপাভলোভস্ক ও ভিলিউচিনস্ক শহরের দক্ষিণ-পূর্বে যথাক্রমে ১৪৭ ও ১৩১ কিলোমিটার দূরে ৬.৯ ও ৬.৩ মাত্রার আরও দুটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়।
ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামি বিশেষজ্ঞ রবার্ট ওয়েইস আল জাজিরাকে জানান, পরিস্থিতি গুরুতর বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই ভূমিকম্প নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটাই সঠিক।”