ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
স্বতন্ত্র কাউন্সিলের দাবি ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষার্থীদের

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও, কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

স্বতন্ত্র ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কাউন্সিল গঠনের দাবিতে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা একপর্যায়ে ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

আজ (সোমবার) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহাখালীর স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মূল ফটকে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের এই অবরোধ অব্যাহত থাকতে দেখা যায়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার। স্বতন্ত্র কাউন্সিল ছাড়া আমাদের চিকিৎসা পেশায় সুনির্দিষ্ট পরিচিতি ও পেশাগত রেজিস্ট্রেশন অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আর ধোঁকায় বিশ্বাস করি না। এবার দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত চাই।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীকৃত ছাত্র। আমাদের সনদ, আমাদের ইন্টার্নশিপ, আমাদের একাডেমিক ট্রেইনিং এমবিবিএস সমমান ধরা হলেও এখনো আমাদের পেশাগত সম্মান প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে চাকরি থেকে উচ্চশিক্ষা—সব জায়গায় আমরা বঞ্চিত।”

জুবায়ের আহসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “বাংলাদেশে শতাব্দী প্রাচীন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা একদিকে যেমন লোকজ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ উৎস, অন্যদিকে তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি ঐতিহ্যবাহী অঙ্গ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজও এই চিকিৎসা পদ্ধতি বৈষম্য, অবহেলা ও নীতিগত অনিয়মের শিকার।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও সহজলভ্য চিকিৎসা হিসেবে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অপরিহার্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশের প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামীণ অঞ্চলের ৮০ শতাংশ জনগণ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।”

সাজ্জাদ নামে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একপক্ষীয় ও পেশাগত মর্যাদাবিরোধী চিঠি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভ্রান্তি ও সংকট তৈরি করেছে। এটি একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর নগ্ন চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে দালাল চক্রের প্রভাবে ভুয়া ডিগ্রীধারীদের পুনঃস্বীকৃতি দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। এমনকি হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিএএমএস ও বিইউএমএস কোর্স পরিচালিত হয়েছে। এসব ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা ২০১২ সালের ‘গ্র্যাজুয়েট ইউনানী-আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নীতিমালা’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরা হঠাৎ করেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। আমরা তাদের ক্ষোভ বুঝি, তবে এভাবে হঠাৎ করে ঘেরাও করে দাবি আদায়ের চেষ্টা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে একটা যৌক্তিক সমাধানে যেতে।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের এসব দাবি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অফিস থেকে জানানো হয় তিনি (মহাপরিচালক) অফিসে আসেননি। এসময় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ট্যাগস :

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

স্বতন্ত্র কাউন্সিলের দাবি ইউনানী-আয়ুর্বেদিক শিক্ষার্থীদের

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও, কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ

আপডেট সময় : ০৯:৫৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

স্বতন্ত্র ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কাউন্সিল গঠনের দাবিতে রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ঘেরাও করেছেন সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা একপর্যায়ে ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

আজ (সোমবার) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহাখালীর স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মূল ফটকে সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের এই অবরোধ অব্যাহত থাকতে দেখা যায়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার। স্বতন্ত্র কাউন্সিল ছাড়া আমাদের চিকিৎসা পেশায় সুনির্দিষ্ট পরিচিতি ও পেশাগত রেজিস্ট্রেশন অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা আর ধোঁকায় বিশ্বাস করি না। এবার দৃশ্যমান সিদ্ধান্ত চাই।”

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীকৃত ছাত্র। আমাদের সনদ, আমাদের ইন্টার্নশিপ, আমাদের একাডেমিক ট্রেইনিং এমবিবিএস সমমান ধরা হলেও এখনো আমাদের পেশাগত সম্মান প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফলে চাকরি থেকে উচ্চশিক্ষা—সব জায়গায় আমরা বঞ্চিত।”

জুবায়ের আহসান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “বাংলাদেশে শতাব্দী প্রাচীন ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ব্যবস্থা একদিকে যেমন লোকজ ও প্রাকৃতিক চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য, নিরাপদ উৎস, অন্যদিকে তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি ঐতিহ্যবাহী অঙ্গ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আজও এই চিকিৎসা পদ্ধতি বৈষম্য, অবহেলা ও নীতিগত অনিয়মের শিকার।”

তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকৃত এই চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষত এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-২০৩০ অর্জনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও সহজলভ্য চিকিৎসা হিসেবে ইউনানী-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অপরিহার্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দেশের প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ এবং গ্রামীণ অঞ্চলের ৮০ শতাংশ জনগণ প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।”

সাজ্জাদ নামে আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একপক্ষীয় ও পেশাগত মর্যাদাবিরোধী চিঠি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভ্রান্তি ও সংকট তৈরি করেছে। এটি একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠীর নগ্ন চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ে দালাল চক্রের প্রভাবে ভুয়া ডিগ্রীধারীদের পুনঃস্বীকৃতি দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে, যা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। এমনকি হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মবহির্ভূতভাবে ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিএএমএস ও বিইউএমএস কোর্স পরিচালিত হয়েছে। এসব ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা ২০১২ সালের ‘গ্র্যাজুয়েট ইউনানী-আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নীতিমালা’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আমরা হঠাৎ করেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি। আমরা তাদের ক্ষোভ বুঝি, তবে এভাবে হঠাৎ করে ঘেরাও করে দাবি আদায়ের চেষ্টা আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটায়। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে একটা যৌক্তিক সমাধানে যেতে।”

এদিকে শিক্ষার্থীদের এসব দাবি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অফিস থেকে জানানো হয় তিনি (মহাপরিচালক) অফিসে আসেননি। এসময় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।