ঢাকা ১০:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেই জাহাজ বিল্ডিংয়ে এখন ভুতুড়ে নীরবতা

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৭
  • 387

তানিম আহমেদ
মিরপুরের কল্যাণপুরের জাহাজবাড়ি| বিশাল ভবনটি ব্যাচেলরদের জন্য ভরসা হিসেবে বিবেচিত হতো। কোথাও বাড়ি ভাড়া পেতে অসুবিধা হলে মাসের যে কোনো সময় সেখানে গিয়ে ঘর পাওয়া যেতো। কিন্তু ছয় মাস আগে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান পাল্টে দিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। এখন ভবনটিসে শুনসান নীরবতা। গত ২৬ জুলাইয়ের অভিযানে ওই ভবনের একটি কক্ষে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ভবনটির তালা আর খোলেনি।

কল্যাণপুরে পাঁচ নম্বর সড়কের সাত তলা ভবনটি জাহাজ বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত হলেও বাড়িটির নাম ‘তাজ মঞ্জিল’। এটি দেখতে জাহাজের মতো বলেই এমন নামকরণ হয়েছে মুখে মুখে। ভবনটির ভেতরে তেমন আলো-বাতাস প্রবেশ না করায় বাড়িটি পরিবার নিয়ে তেমন কেউ বসবাস করত না। অন্যদিকে মাসের যেকোনো সময় এলেই ভাড়া পাওয়া যায়, এমন সুবিধা থাকায় এটি ব্যাচেলরদের কাছে খুব পরিচিত ছিল।

গত ২৬ জুলাই তাজ মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর অভিযানের পর বাড়িটি পরিচিতি পায় দেশ জুড়ে। রাতভর অভিযানে ওই কক্ষে থাকা নয় জন জঙ্গি প্রাণ হারানোর পাশাপাশি জীবিত অবস্থান ধরা পড়েছিলেন একজন। পরে কক্ষটি থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেই অভিযানের পরই এ বাসা থেকে ভাড়াটিয়াদের বের করে তালা দেয়া হয়। কিন্তু এরপর আর সেখানে কোনো ভাড়াটিয়া ওঠেনি।

নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে ভাড়া দেয়ার বিষয়ে থানায় তথ্য না জানানোর অভিযোগে এই অভিযানের পর জাহাজবাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মমতাজ পারভীন এবং ছেলে মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা পরে জামিনে ছাড়া পান। আতাহার উদ্দিন আহমেদ স্বপরিবারে পুরানো ঢাকায় থাকেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

সেদিনের অভিযানের পর এরপরই ভবনটির সামনে দুই মাসের মত অবস্থান ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু পরে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়। বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয় মালিকের কাছে।

কিন্তু পুলিশের জঙ্গিবিরোধী এক অভিযান জাহাজবাড়ির কদর শূন্যে নামিয়ে এনেছে ব্যাচেলরদের কাছেও। এখন আর কেউ বাড়ি ভাড়া করতে যান না। আর মালিকও এখানে থাকেন না। ছয় মাস আগেও মানুষের পদচারণে মুখর ভবনটি এখন জনমানবহীন। সেখানে এখন ভুতুড়ে নীরবতা।

শনিবার সকালে সরেজমিনে জাহাজবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির গেটে দুটি তালা দেয়া। ভবনটির দেয়ালের কোথাও ঝুলানো নেই বাসা ভাড়ার কোনো বিজ্ঞপ্তি।

জাহাজবাড়ির সামনের একটি দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর ১০-১২ দিন আমরা দোকান খুলতে পারি নাই। এরপর দোকান খুললেও সেভাবে ক্রেতা আসত না। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’

এ কর্মচারী জানান, ‘অভিযানের পরও দুই মাসের মতো বাড়ির গেটে সারাক্ষণ পুলিশ অবস্থান করত। এরপর সরিয়ে নেয়া হয় পুলিশ। বাড়ির মালিকও তেমন আসেন না। ২০-২৫ দিন আগে একবার তিনি এসেছিলেন। তিনি তালা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিন্তু তিনি কী করতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি।’

হামিদুর রহমান নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘জাহাজবাড়িতে ব্যাচেলর বেশি থাকায় এখানে মানুষ বেশি থাকত। আর বাড়িটি বিশালাকৃতির হওয়ায় বাড়ির দেয়ালে বাড়ি ভাড়ার তিন-চারটা বিজ্ঞাপন সব সময়ই থাকত। কিন্তু এখন তা নেই।’

কল্যাণপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রতন বলেন, ‘পুলিশ অভিযানের পর থেকে বাসার গেটে তালা দেয়া আছে। আমরা মালিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগ করছেন না।’

অভিযানের পর পর পুলিশ বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও পরে তা মালিকের তত্ত্বাবধানে ফিরিয়ে দেয়। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূইয়া মাহবুব হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বাড়িটির সবকিছু মালিকের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি বাড়িটি ভাড়া দিতে চাইলে তা দিতে পারবেন। তবে ভাড়াটেদের বিষয়ে আগাম তথ্য আমাদেরকে জানাতে হবে।’

বাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে তিনি বলেন, ‘ওই বাড়ির চাবি দেয়া হলৌ পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের লাইন যে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তা এখনও চালু করা হয়নি। দেখি কয়েকদিন পরে গিয়ে বাসাটা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করবো।’

আতাহার আলী বলেন, ‘কিছুদিন আগে জামিন পেয়েছি। এই কয় মাসে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।’

ট্যাগস :

সেই জাহাজ বিল্ডিংয়ে এখন ভুতুড়ে নীরবতা

আপডেট সময় : ০৩:২৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৭

তানিম আহমেদ
মিরপুরের কল্যাণপুরের জাহাজবাড়ি| বিশাল ভবনটি ব্যাচেলরদের জন্য ভরসা হিসেবে বিবেচিত হতো। কোথাও বাড়ি ভাড়া পেতে অসুবিধা হলে মাসের যে কোনো সময় সেখানে গিয়ে ঘর পাওয়া যেতো। কিন্তু ছয় মাস আগে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান পাল্টে দিয়েছে পুরো পরিস্থিতি। এখন ভবনটিসে শুনসান নীরবতা। গত ২৬ জুলাইয়ের অভিযানে ওই ভবনের একটি কক্ষে সন্দেহভাজন নয় জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। ওই ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া ভবনটির তালা আর খোলেনি।

কল্যাণপুরে পাঁচ নম্বর সড়কের সাত তলা ভবনটি জাহাজ বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত হলেও বাড়িটির নাম ‘তাজ মঞ্জিল’। এটি দেখতে জাহাজের মতো বলেই এমন নামকরণ হয়েছে মুখে মুখে। ভবনটির ভেতরে তেমন আলো-বাতাস প্রবেশ না করায় বাড়িটি পরিবার নিয়ে তেমন কেউ বসবাস করত না। অন্যদিকে মাসের যেকোনো সময় এলেই ভাড়া পাওয়া যায়, এমন সুবিধা থাকায় এটি ব্যাচেলরদের কাছে খুব পরিচিত ছিল।

গত ২৬ জুলাই তাজ মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনীর অভিযানের পর বাড়িটি পরিচিতি পায় দেশ জুড়ে। রাতভর অভিযানে ওই কক্ষে থাকা নয় জন জঙ্গি প্রাণ হারানোর পাশাপাশি জীবিত অবস্থান ধরা পড়েছিলেন একজন। পরে কক্ষটি থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেই অভিযানের পরই এ বাসা থেকে ভাড়াটিয়াদের বের করে তালা দেয়া হয়। কিন্তু এরপর আর সেখানে কোনো ভাড়াটিয়া ওঠেনি।

নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিদেরকে ভাড়া দেয়ার বিষয়ে থানায় তথ্য না জানানোর অভিযোগে এই অভিযানের পর জাহাজবাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী মমতাজ পারভীন এবং ছেলে মাজহারুল ইসলামসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা পরে জামিনে ছাড়া পান। আতাহার উদ্দিন আহমেদ স্বপরিবারে পুরানো ঢাকায় থাকেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান।

সেদিনের অভিযানের পর এরপরই ভবনটির সামনে দুই মাসের মত অবস্থান ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু পরে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়। বাড়ির চাবি হস্তান্তর করা হয় মালিকের কাছে।

কিন্তু পুলিশের জঙ্গিবিরোধী এক অভিযান জাহাজবাড়ির কদর শূন্যে নামিয়ে এনেছে ব্যাচেলরদের কাছেও। এখন আর কেউ বাড়ি ভাড়া করতে যান না। আর মালিকও এখানে থাকেন না। ছয় মাস আগেও মানুষের পদচারণে মুখর ভবনটি এখন জনমানবহীন। সেখানে এখন ভুতুড়ে নীরবতা।

শনিবার সকালে সরেজমিনে জাহাজবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির গেটে দুটি তালা দেয়া। ভবনটির দেয়ালের কোথাও ঝুলানো নেই বাসা ভাড়ার কোনো বিজ্ঞপ্তি।

জাহাজবাড়ির সামনের একটি দোকানের কর্মচারী বলেন, ‘জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর ১০-১২ দিন আমরা দোকান খুলতে পারি নাই। এরপর দোকান খুললেও সেভাবে ক্রেতা আসত না। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’

এ কর্মচারী জানান, ‘অভিযানের পরও দুই মাসের মতো বাড়ির গেটে সারাক্ষণ পুলিশ অবস্থান করত। এরপর সরিয়ে নেয়া হয় পুলিশ। বাড়ির মালিকও তেমন আসেন না। ২০-২৫ দিন আগে একবার তিনি এসেছিলেন। তিনি তালা খুলে ভেতরে ঢুকেছিলেন। কিন্তু তিনি কী করতে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়নি।’

হামিদুর রহমান নামে স্থানীয় একজন বলেন, ‘জাহাজবাড়িতে ব্যাচেলর বেশি থাকায় এখানে মানুষ বেশি থাকত। আর বাড়িটি বিশালাকৃতির হওয়ায় বাড়ির দেয়ালে বাড়ি ভাড়ার তিন-চারটা বিজ্ঞাপন সব সময়ই থাকত। কিন্তু এখন তা নেই।’

কল্যাণপুর সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান রতন বলেন, ‘পুলিশ অভিযানের পর থেকে বাসার গেটে তালা দেয়া আছে। আমরা মালিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে কোন ধরণের যোগাযোগ করছেন না।’

অভিযানের পর পর পুলিশ বাড়িটির নিয়ন্ত্রণ নিলেও পরে তা মালিকের তত্ত্বাবধানে ফিরিয়ে দেয়। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূইয়া মাহবুব হাসান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা বাড়িটির সবকিছু মালিকের হাতে বুঝিয়ে দিয়েছি। তিনি বাড়িটি ভাড়া দিতে চাইলে তা দিতে পারবেন। তবে ভাড়াটেদের বিষয়ে আগাম তথ্য আমাদেরকে জানাতে হবে।’

বাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও কথা হয়েছে তিনি বলেন, ‘ওই বাড়ির চাবি দেয়া হলৌ পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের লাইন যে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, তা এখনও চালু করা হয়নি। দেখি কয়েকদিন পরে গিয়ে বাসাটা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করবো।’

আতাহার আলী বলেন, ‘কিছুদিন আগে জামিন পেয়েছি। এই কয় মাসে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো।’