ঢাকা ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে, কিছু করুন সরকার বাহাদুর

  • প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৯:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • 472


গত শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি, বনানী অফিস থে‌কে বাড্ডা যাওয়ার সময় নতুন বাজার থে‌কে ছোট গা‌ড়ি বন্ধু পরিবহনে উঠলাম। বা‌সের দরজায় পা রাখ‌তেই সহকারী ‌চিৎকার ক‌রে উঠ‌লেন, ‘সি‌টিং কিন্তু আফা’। তারপর তিনি চিৎকার ক‌রে যাত্রী তুল‌তে ডাক‌তে থাক‌লেন। যখনই কেউ উঠ‌ছেন ব‌লে দি‌চ্ছেন, সি‌টিং গা‌ড়ি।

যাত্রীরা সবাই অবাক হ‌য়ে জি‌জ্ঞেস কর‌লেন সি‌টিং কেন? ক‌বে থে‌কে। চালকের সহকারী বল‌লেন, ১৪\১৫ দিন ধ‌রে। নতুন বাজার থে‌কে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত বন্ধু প‌রিবহ‌নে পাঁচ টাকার ভাড়া রাখা হ‌লো ১০ টাকা।
গাজীপুর থেকে রামপুরা হয়ে গুলিস্তান ও সদরঘাট রুটে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা লোকাল সুপ্রভাত ও ভিক্টর সার্ভিসের মিনিবাস রামপুরা হাজীপাড়া রেলগেট মালিবাগ হয়ে চলাচল করা ভাঙাচোরা লোকাল গা‌ড়িগু‌লো‌কে রঙ মে‌খে অনেক ক্ষেত্রে রঙ ছাড়াই ‌সিটিং করা হ‌য়ে‌ছে। যে কোন দূর‌ত্বে রাখা হ‌চ্ছে সর্ব‌নিন্ম ২০ টাকা ভাড়া।
চালককে জি‌জ্ঞেস করলাম, ‘লোকাল বাস সি‌টিং ক‌রে‌ছেন, পার‌মিশন আছে?’। তার সহকারী বল‌লেন, ‘হ্যাঁ আছে’। ‘কে দি‌য়ে‌ছে পার‌মিশন?’ বল‌লেন, ‘গোড়া থে‌কেই নি‌ছি!’

অথচ গণপরিবহন–ব্যবস্থায়, কিংবা লাইসেন্স নেয়ার সময় সিটিং সার্ভিস না‌মে ভাড়া আদা‌য়ের কোন ব্যবস্থার কথা বলা নাই। এ ক্ষেত্রে সিটিং সা‌র্ভিস না‌মেও কোন সুযোগ থাকে না। আর মানুষ‌কে তারা কতটা বোকা ভাবে? যে যেভা‌বে পার‌ছে ইচ্ছেম‌তো সা‌র্ভিস বা‌নি‌য়ে ভাড়া বাড়া‌চ্ছে। নানা রকম প্রতারণায় জনগ‌নের র‌ক্ত পা‌নি করা প‌রিশ্র‌মের টাকা লু‌টেপু‌টে খা‌চ্ছে? দেখারও কেউ নেই?
শুধু যে এই রুটে নয়, প্র‌ত্যেকটা রুটেই নি‌জে‌দের ইচ্ছেম‌তো প‌রিবহন মা‌লিকরা ভাড়া বাড়া‌চ্ছেন। সরকারি পরিবহ‌নে বিআর‌টি‌সি তে ১৪ টাকার ভাড়া সবসময়ই রাখা হ‌চ্ছে ২০ টাকা ক‌রে। পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ টাকা। জি‌জ্ঞেস করলেই ব‌লে গ্যা‌সের দাম বে‌ড়ে‌ছে। তাই ভাড়া বে‌ড়ে‌ছে। এটাই তা‌দের একমাত্র অযুহাত। নেই ভাড়ার চার্টও।

‌লোকাল ভাড়া ৫ টাকা হ‌লেও অ‌ধিকাংশ বেসরকা‌রি প‌রিবহ‌নে তা শুরু হয় ১০ টাকা থে‌কে। ভিআইপি না‌মের বাসসহ ক‌য়েকটি বা‌সে সর্বনিন্ম ভাড়া রাখা হয় ৪০ টাকা কিংবা তারও বে‌শি। এর আগের এক‌টি লেখায় সংক্ষেপে তা তু‌লে ধ‌রে‌ছিলাম। কোন আইন না হওয়ায় ছাত্রদের কাছ থেকেও ইদা‌নীং নেয়া হ‌চ্ছে ফুল ভাড়া। য‌দিও মন্ত্রী ব‌লে‌ছি‌লেন হাফভাড়া নেয়ার জন্য। সেস‌বের তোয়াক্কা কর‌ছেন না কেউই। ‌
১৫/২০ দিন আগে আমার এক সহকর্মী অনেকটাই কান্নার সু‌রে চাপা ক্ষোভ নি‌য়ে বল‌লেন, ‘চাক‌রি ক‌রে পড়াশোনা চালাই। ফ্যা‌মি‌লিও সা‌পোর্ট দি‌তে হয়। দি‌তে হয় ঘরভাড়া খাওয়ার খরচ। অনেক ক‌ষ্টে চ‌লি। ‌নি‌জের সারা‌দি‌নের খরচ ১০০ টাকা নি‌য়ে বের হই প্র‌তি‌দিন। লাঞ্চ কর‌তে গে‌লেই তো ১০০ টাকার উপ‌রে চ‌লে যায়। তাই দুপু‌রে হালকা রু‌টি কিংবা অন্য কিছু খাই। অনেক সময় না খে‌য়েও থা‌কি। এত‌দিন স্টু‌ডেন্ট ভাড়া ১০ টাকা দি‌য়ে যেখা‌নে যাতায়াত করতাম, এখন সেখা‌নে রাখ‌ছে ৪০ টাকা? এক কি‌লোমিটার রাস্তা ৫\৭ টাকার বদলে ওরা কীভা‌বে এত টাকা রা‌খে? তার উপর গ্যা‌সের দাম বাড়া‌তে বা‌ড়িভাড়া তো বাড়া‌বেই, গা‌ড়ি ভাড়াও আরও বা‌ড়ি‌য়ে দি‌বে। এখন তো প‌রিবার শুদ্ধ না খে‌য়ে মরার অবস্থা’।

তার কথা শু‌নে ভাবলাম, আস‌লেই তো! সধারণ মানুষ আমরা বেতন পাই বা কত? আপ‌নারা যারা গ্যা‌সের দাম বাড়া‌চ্ছেন, তারা তো লাখ লাখ কো‌টি কো‌টি টাকা ইনকাম ক‌রেন। আমরা তো ক‌রি না। একজন সাধারণ মানুষের বেতন সর্বনিন্ম ১৫ হাজার টাকাও য‌দি ধ‌রি, (যদিও সর্বনিন্ম বেতন ১০ হাজার টাকার নীচে) ঢাকা শহরে ছোট প‌রিবার নি‌য়ে থাক‌তে গে‌লে মোটামু‌টি দুই কক্ষের এক‌টি বাসা ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা চ‌লে যায়। ত‌বে সেটা এলাকা ভে‌দে কম বা বে‌শি হ‌য়ে থা‌কে। পা‌নির বিল এবং বিদ্যুৎ বিল যায় কমপ‌ক্ষে আরও এক হাজার টাকা। এগু‌লো হ‌চ্ছে নিন্ম মধ্য আয়ের মানু‌ষের হি‌সাব? অনে‌কে সাব‌লেট থা‌কেন টাকা বাঁচা‌তে। তার উপর সন্তানের পড়ার খরচ তো আছেই।

দ‌রিদ্ররা তো অনেকে টাকার অভা‌বে সন্তান‌কে পড়াতেই পারেন না। তার উপর য‌দি অধিকাংশ টাকা আপনা‌দের ট্যাক্স ও রাজস্ব বাড়ানোর মহৎ কাজ আর সার্ভিস চার্জ দিতে দি‌তেই চ‌লে যায়, তাহ‌লে কীভা‌বে চলে এক‌টি মধ্যবিত্তের সংসার? ভেবেছেন একবার?
গ‌রিবদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমার আগের এক‌টি লেখায় ব‌লে‌ছিলাম সি‌লিন্ডার বা এল‌পি গ্যা‌সের খরচ সম্পর্কে। এবার আসি মানসম্মত সি‌লিন্ডার গ্যাস বা এল‌পি গ্যাস প্রস‌ঙ্গে। আমরা দেখ‌ছি কেমন সি‌লিন্ডার আমাদের ঘাড়ে চা‌পি‌য়ে দি‌চ্ছেন আপনারা। বি‌ভিন্ন বা‌সে ব্যবহৃত নিন্মমা‌নের সি‌লিন্ডার যে কিছু‌দিন পরপর বিস্ফোর‌ণে হতাহতের ঘটনা ঘট‌ছে, কত নিউজ হ‌চ্ছে তা আপনারা দেখেন, দে‌খেও চোখ বুঁজে থা‌কেন। কারণ মানুষ মরুক তাতে আপনা‌দের কিছু যায় আসে না, আপনা‌দের প্র‌য়োজন লভ্যাং‌শ। জনগ‌ণের সেবা না।
বাসাবা‌ড়ি‌তেও এর চে‌য়ে ভা‌লো মা‌নের সি‌লিন্ডার দেন, তার গ্যারা‌ন্টি নাই। বাসা বা‌ড়ি‌তে নিন্মমা‌নের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অনেকেই নিহত হ‌য়ে‌ছেন। প‌ত্রিকা অনলাইন কিংবা টে‌লি‌ভিশ‌নে চোখ রাখ‌লেই ভে‌সে উঠ‌বে সেসব দুর্ঘটনার চিত্র।
কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্যাস সি‌লিন্ডার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিন্মমান আর ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে রাখলে তা চলন্ত বোমার মতো, আর বাড়িতে থাকলে নিজেই তা বিধ্বংসী অস্ত্র। এমন কথাই ব‌লে‌ছেন বি‌শেষজ্ঞরা, সতর্কও কর‌ছেন। কিন্তু এ দে‌শে ত্রু‌টিমুক্ত গ্যাস সি‌লিন্ডা‌রের নিশ্চয়তা কে দে‌বে?

গ্যাসের দাম বাড়া‌চ্ছেন, আরও বাড়া‌বেন। এতে বা‌ড়িওয়ালা, বাস মা‌লিক, সিএন‌জি চালক বাড়াবেন ভাড়া, এর ফ‌লে পণ্যের আনা নেয়ার খরচ বে‌ড়ে যা‌বে, তাই কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা বাড়াবেন নিত্যপ‌ণ্যের দাম।
আস‌লে আপনারা চান কি? আপনারা কি চান না দে‌শের মানুষ একটু শা‌ন্তি‌তে প‌রিবার প‌রিজন নি‌য়ে তিন ‌বেলা খে‌য়ে বাঁচুক? আপনারা কি চান না দে‌শের মানুষগু‌লো পড়াশোনা করুক? হয়ত সি‌লিন্ডার গ্যাস কোম্পা‌নির সঙ্গে আপনা‌দের চু‌ক্তি থাক‌তে পা‌রে। কিন্তু মানু‌ষের জীবন নি‌য়ে খেলার চু‌ক্তি তো আপনারা কর‌তে পা‌রেন না? সেই অধিকার তো আপনা‌দের দেয়া হয়নি।

রাস্তায় গু‌লি খেয়ে মানু‌ষের মরে যাওয়াকে মন্ত্রী যেমন বলেন, এটি বি‌চ্ছিন্ন ঘটনা। তেমনি হয়ত আমার কথাকেও উ‌ড়ি‌য়ে দেবেন। আমারও মূল্যায়ন আপনার কাছে হয়তো নেই। কিন্তু, এসব কথা ‌তো আমার একার নয়, এ ক্ষোভ দে‌শের লক্ষ কো‌টি মানু‌ষের। বিশ্বাস না হ‌লে এক‌দিন বের হন না কোন গা‌ড়িবহর ছাড়া, কোন প্রটোকল ছাড়া, একদম আমা‌দের ম‌তো আমজনতা হ‌য়ে। সাধারণ পোশাক, সাধারণ স্যা‌ন্ডেল পা‌য়ে উঠুন না এক‌দিন চড়ুন না লোকাল কিংবা সি‌টিং না‌মের বা‌সে; পকেটে ১০০ টাকা নিয়ে হাঁটুন না একদিন, দুই টাকার শুক‌নো মু‌ড়ি ‌কিংবা পাঁচ টাকার রুটি খে‌য়ে। চারপা‌শের আহাজারি আর ক‌ষ্টের ধ্ব‌নিগু‌লো কি তখন আপনার বি‌বেক নাড়া দেবে না?
‌লেখক: সাংবা‌দিক, ‌রে‌ডিও টু‌ডে

ট্যাগস :

সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে, কিছু করুন সরকার বাহাদুর

আপডেট সময় : ০৯:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭


গত শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি, বনানী অফিস থে‌কে বাড্ডা যাওয়ার সময় নতুন বাজার থে‌কে ছোট গা‌ড়ি বন্ধু পরিবহনে উঠলাম। বা‌সের দরজায় পা রাখ‌তেই সহকারী ‌চিৎকার ক‌রে উঠ‌লেন, ‘সি‌টিং কিন্তু আফা’। তারপর তিনি চিৎকার ক‌রে যাত্রী তুল‌তে ডাক‌তে থাক‌লেন। যখনই কেউ উঠ‌ছেন ব‌লে দি‌চ্ছেন, সি‌টিং গা‌ড়ি।

যাত্রীরা সবাই অবাক হ‌য়ে জি‌জ্ঞেস কর‌লেন সি‌টিং কেন? ক‌বে থে‌কে। চালকের সহকারী বল‌লেন, ১৪\১৫ দিন ধ‌রে। নতুন বাজার থে‌কে মধ্যবাড্ডা পর্যন্ত বন্ধু প‌রিবহ‌নে পাঁচ টাকার ভাড়া রাখা হ‌লো ১০ টাকা।
গাজীপুর থেকে রামপুরা হয়ে গুলিস্তান ও সদরঘাট রুটে দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা লোকাল সুপ্রভাত ও ভিক্টর সার্ভিসের মিনিবাস রামপুরা হাজীপাড়া রেলগেট মালিবাগ হয়ে চলাচল করা ভাঙাচোরা লোকাল গা‌ড়িগু‌লো‌কে রঙ মে‌খে অনেক ক্ষেত্রে রঙ ছাড়াই ‌সিটিং করা হ‌য়ে‌ছে। যে কোন দূর‌ত্বে রাখা হ‌চ্ছে সর্ব‌নিন্ম ২০ টাকা ভাড়া।
চালককে জি‌জ্ঞেস করলাম, ‘লোকাল বাস সি‌টিং ক‌রে‌ছেন, পার‌মিশন আছে?’। তার সহকারী বল‌লেন, ‘হ্যাঁ আছে’। ‘কে দি‌য়ে‌ছে পার‌মিশন?’ বল‌লেন, ‘গোড়া থে‌কেই নি‌ছি!’

অথচ গণপরিবহন–ব্যবস্থায়, কিংবা লাইসেন্স নেয়ার সময় সিটিং সার্ভিস না‌মে ভাড়া আদা‌য়ের কোন ব্যবস্থার কথা বলা নাই। এ ক্ষেত্রে সিটিং সা‌র্ভিস না‌মেও কোন সুযোগ থাকে না। আর মানুষ‌কে তারা কতটা বোকা ভাবে? যে যেভা‌বে পার‌ছে ইচ্ছেম‌তো সা‌র্ভিস বা‌নি‌য়ে ভাড়া বাড়া‌চ্ছে। নানা রকম প্রতারণায় জনগ‌নের র‌ক্ত পা‌নি করা প‌রিশ্র‌মের টাকা লু‌টেপু‌টে খা‌চ্ছে? দেখারও কেউ নেই?
শুধু যে এই রুটে নয়, প্র‌ত্যেকটা রুটেই নি‌জে‌দের ইচ্ছেম‌তো প‌রিবহন মা‌লিকরা ভাড়া বাড়া‌চ্ছেন। সরকারি পরিবহ‌নে বিআর‌টি‌সি তে ১৪ টাকার ভাড়া সবসময়ই রাখা হ‌চ্ছে ২০ টাকা ক‌রে। পাঁচ টাকার ভাড়া ১০ টাকা। জি‌জ্ঞেস করলেই ব‌লে গ্যা‌সের দাম বে‌ড়ে‌ছে। তাই ভাড়া বে‌ড়ে‌ছে। এটাই তা‌দের একমাত্র অযুহাত। নেই ভাড়ার চার্টও।

‌লোকাল ভাড়া ৫ টাকা হ‌লেও অ‌ধিকাংশ বেসরকা‌রি প‌রিবহ‌নে তা শুরু হয় ১০ টাকা থে‌কে। ভিআইপি না‌মের বাসসহ ক‌য়েকটি বা‌সে সর্বনিন্ম ভাড়া রাখা হয় ৪০ টাকা কিংবা তারও বে‌শি। এর আগের এক‌টি লেখায় সংক্ষেপে তা তু‌লে ধ‌রে‌ছিলাম। কোন আইন না হওয়ায় ছাত্রদের কাছ থেকেও ইদা‌নীং নেয়া হ‌চ্ছে ফুল ভাড়া। য‌দিও মন্ত্রী ব‌লে‌ছি‌লেন হাফভাড়া নেয়ার জন্য। সেস‌বের তোয়াক্কা কর‌ছেন না কেউই। ‌
১৫/২০ দিন আগে আমার এক সহকর্মী অনেকটাই কান্নার সু‌রে চাপা ক্ষোভ নি‌য়ে বল‌লেন, ‘চাক‌রি ক‌রে পড়াশোনা চালাই। ফ্যা‌মি‌লিও সা‌পোর্ট দি‌তে হয়। দি‌তে হয় ঘরভাড়া খাওয়ার খরচ। অনেক ক‌ষ্টে চ‌লি। ‌নি‌জের সারা‌দি‌নের খরচ ১০০ টাকা নি‌য়ে বের হই প্র‌তি‌দিন। লাঞ্চ কর‌তে গে‌লেই তো ১০০ টাকার উপ‌রে চ‌লে যায়। তাই দুপু‌রে হালকা রু‌টি কিংবা অন্য কিছু খাই। অনেক সময় না খে‌য়েও থা‌কি। এত‌দিন স্টু‌ডেন্ট ভাড়া ১০ টাকা দি‌য়ে যেখা‌নে যাতায়াত করতাম, এখন সেখা‌নে রাখ‌ছে ৪০ টাকা? এক কি‌লোমিটার রাস্তা ৫\৭ টাকার বদলে ওরা কীভা‌বে এত টাকা রা‌খে? তার উপর গ্যা‌সের দাম বাড়া‌তে বা‌ড়িভাড়া তো বাড়া‌বেই, গা‌ড়ি ভাড়াও আরও বা‌ড়ি‌য়ে দি‌বে। এখন তো প‌রিবার শুদ্ধ না খে‌য়ে মরার অবস্থা’।

তার কথা শু‌নে ভাবলাম, আস‌লেই তো! সধারণ মানুষ আমরা বেতন পাই বা কত? আপ‌নারা যারা গ্যা‌সের দাম বাড়া‌চ্ছেন, তারা তো লাখ লাখ কো‌টি কো‌টি টাকা ইনকাম ক‌রেন। আমরা তো ক‌রি না। একজন সাধারণ মানুষের বেতন সর্বনিন্ম ১৫ হাজার টাকাও য‌দি ধ‌রি, (যদিও সর্বনিন্ম বেতন ১০ হাজার টাকার নীচে) ঢাকা শহরে ছোট প‌রিবার নি‌য়ে থাক‌তে গে‌লে মোটামু‌টি দুই কক্ষের এক‌টি বাসা ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা চ‌লে যায়। ত‌বে সেটা এলাকা ভে‌দে কম বা বে‌শি হ‌য়ে থা‌কে। পা‌নির বিল এবং বিদ্যুৎ বিল যায় কমপ‌ক্ষে আরও এক হাজার টাকা। এগু‌লো হ‌চ্ছে নিন্ম মধ্য আয়ের মানু‌ষের হি‌সাব? অনে‌কে সাব‌লেট থা‌কেন টাকা বাঁচা‌তে। তার উপর সন্তানের পড়ার খরচ তো আছেই।

দ‌রিদ্ররা তো অনেকে টাকার অভা‌বে সন্তান‌কে পড়াতেই পারেন না। তার উপর য‌দি অধিকাংশ টাকা আপনা‌দের ট্যাক্স ও রাজস্ব বাড়ানোর মহৎ কাজ আর সার্ভিস চার্জ দিতে দি‌তেই চ‌লে যায়, তাহ‌লে কীভা‌বে চলে এক‌টি মধ্যবিত্তের সংসার? ভেবেছেন একবার?
গ‌রিবদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমার আগের এক‌টি লেখায় ব‌লে‌ছিলাম সি‌লিন্ডার বা এল‌পি গ্যা‌সের খরচ সম্পর্কে। এবার আসি মানসম্মত সি‌লিন্ডার গ্যাস বা এল‌পি গ্যাস প্রস‌ঙ্গে। আমরা দেখ‌ছি কেমন সি‌লিন্ডার আমাদের ঘাড়ে চা‌পি‌য়ে দি‌চ্ছেন আপনারা। বি‌ভিন্ন বা‌সে ব্যবহৃত নিন্মমা‌নের সি‌লিন্ডার যে কিছু‌দিন পরপর বিস্ফোর‌ণে হতাহতের ঘটনা ঘট‌ছে, কত নিউজ হ‌চ্ছে তা আপনারা দেখেন, দে‌খেও চোখ বুঁজে থা‌কেন। কারণ মানুষ মরুক তাতে আপনা‌দের কিছু যায় আসে না, আপনা‌দের প্র‌য়োজন লভ্যাং‌শ। জনগ‌ণের সেবা না।
বাসাবা‌ড়ি‌তেও এর চে‌য়ে ভা‌লো মা‌নের সি‌লিন্ডার দেন, তার গ্যারা‌ন্টি নাই। বাসা বা‌ড়ি‌তে নিন্মমা‌নের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অনেকেই নিহত হ‌য়ে‌ছেন। প‌ত্রিকা অনলাইন কিংবা টে‌লি‌ভিশ‌নে চোখ রাখ‌লেই ভে‌সে উঠ‌বে সেসব দুর্ঘটনার চিত্র।
কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এই গ্যাস সি‌লিন্ডার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিন্মমান আর ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার গাড়িতে রাখলে তা চলন্ত বোমার মতো, আর বাড়িতে থাকলে নিজেই তা বিধ্বংসী অস্ত্র। এমন কথাই ব‌লে‌ছেন বি‌শেষজ্ঞরা, সতর্কও কর‌ছেন। কিন্তু এ দে‌শে ত্রু‌টিমুক্ত গ্যাস সি‌লিন্ডা‌রের নিশ্চয়তা কে দে‌বে?

গ্যাসের দাম বাড়া‌চ্ছেন, আরও বাড়া‌বেন। এতে বা‌ড়িওয়ালা, বাস মা‌লিক, সিএন‌জি চালক বাড়াবেন ভাড়া, এর ফ‌লে পণ্যের আনা নেয়ার খরচ বে‌ড়ে যা‌বে, তাই কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা বাড়াবেন নিত্যপ‌ণ্যের দাম।
আস‌লে আপনারা চান কি? আপনারা কি চান না দে‌শের মানুষ একটু শা‌ন্তি‌তে প‌রিবার প‌রিজন নি‌য়ে তিন ‌বেলা খে‌য়ে বাঁচুক? আপনারা কি চান না দে‌শের মানুষগু‌লো পড়াশোনা করুক? হয়ত সি‌লিন্ডার গ্যাস কোম্পা‌নির সঙ্গে আপনা‌দের চু‌ক্তি থাক‌তে পা‌রে। কিন্তু মানু‌ষের জীবন নি‌য়ে খেলার চু‌ক্তি তো আপনারা কর‌তে পা‌রেন না? সেই অধিকার তো আপনা‌দের দেয়া হয়নি।

রাস্তায় গু‌লি খেয়ে মানু‌ষের মরে যাওয়াকে মন্ত্রী যেমন বলেন, এটি বি‌চ্ছিন্ন ঘটনা। তেমনি হয়ত আমার কথাকেও উ‌ড়ি‌য়ে দেবেন। আমারও মূল্যায়ন আপনার কাছে হয়তো নেই। কিন্তু, এসব কথা ‌তো আমার একার নয়, এ ক্ষোভ দে‌শের লক্ষ কো‌টি মানু‌ষের। বিশ্বাস না হ‌লে এক‌দিন বের হন না কোন গা‌ড়িবহর ছাড়া, কোন প্রটোকল ছাড়া, একদম আমা‌দের ম‌তো আমজনতা হ‌য়ে। সাধারণ পোশাক, সাধারণ স্যা‌ন্ডেল পা‌য়ে উঠুন না এক‌দিন চড়ুন না লোকাল কিংবা সি‌টিং না‌মের বা‌সে; পকেটে ১০০ টাকা নিয়ে হাঁটুন না একদিন, দুই টাকার শুক‌নো মু‌ড়ি ‌কিংবা পাঁচ টাকার রুটি খে‌য়ে। চারপা‌শের আহাজারি আর ক‌ষ্টের ধ্ব‌নিগু‌লো কি তখন আপনার বি‌বেক নাড়া দেবে না?
‌লেখক: সাংবা‌দিক, ‌রে‌ডিও টু‌ডে